সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে চলন্ত বাস থেকে লাফ দেয়া সেই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার মধ্যরাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা।
তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া হাতেও আঘাত পেয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় তরুণীর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আসামি করে দিরাই থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় দিরাইয়ে চলন্ত বাসে ওই তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান বাসের চালক ও তার সহযোগী। ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাসের জানালা দিয়ে লাফ দেন তিনি।
দিরাই পৌর এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী। তিনি সিলেটের লামাকাজি এলাকার বোনের বাড়ি থেকে বাসে করে দিরাইয়ে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
শনিবার রাতে ওই তরুণীকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোন জামাই।
- আরও পড়ুন: ধর্ষণ থেকে বাঁচতে চলন্ত বাস থেকে লাফ
তিনি বলেন, ‘দুপুরে লামাকাজি থেকে আমি তাকে বাসে তুলে দিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় দিরাই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার আগে বাস ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় চালক ও হেলপার তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। জীবন বাঁচাতে সে বাসের জানালা দিয়ে লাফ দেয়। এরপর বাসটি গতি বাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে যায়।
‘ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় দুজন আমার শ্যালিকাকে উদ্ধার করে দিরাই হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে আমরা ওসমানীতে মেডিক্যালে নিয়ে আসি।’
তরুণীর ভগ্নিপতি বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ বাসটি আটক করেছে। তবে এখনও চালক ও হেলপারকে ধরতে পারেনি।’
তবে বাসমালিকদের সহায়তায় চালক ও হেলপারকে চিহ্নিত করে তাদের ছবি পুলিশকে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
খবর পেয়ে মধ্যরাতে ওসমানী হাসপাতালে আসেন সিলেট বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুকিত মুকুল।
তিনি বলেন, ‘এটি খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। সিলেট বিভাগে আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। এটি পুরো পরিবহন জগতের জন্য লজ্জার।’
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মুকিত। তাদের ধরতে পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তরুণীর পরিবারের পাশে থাকার কথা জানান তিনি।
সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘ওই তরুণী মাথায় ও হাতে আঘাত পেয়েছেন। মাথার আঘাত গুরুতর মনে হচ্ছে।’
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম মামলা করার কথা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসামিদের ধরতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি।’
শনিবার বিকেলে দিরাই উপজেলার মদনপুর সড়কের সুজানগর এলাকায় ওই ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলাচলকারী ফাহাদ অ্যান্ড মাইশা পরিবহনের বাস ছিল সেটি।
জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাতে দিরাইয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মেয়েটির বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে। শনিবার সন্ধ্যায় মেয়ে জামাই ওকে দিরাইয়ের একটি বাসে তুলে দেয়।
‘সুজানগর এলাকায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় চালক ও তার সহযোগী। আমার মেয়ে বাঁচার জন্য গাড়ি থেকে লাফ দিলে হাতে ও মাথায় আঘাত পায়।’