বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাঁচ দশক পর মুক্তিযুদ্ধের বীরের সমাধির সন্ধান

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:২৮

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাটে বিদ্যুতের সাবস্টেশনটিতে ’৭১ সালের ৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা হামলা করেন। সেখানে শহিদ হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান। তার কবর নিজ গ্রামে আনা হচ্ছে।

পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সামনা-সামনি যুদ্ধে শহিদ হন বীর বিক্রম আব্দুল মান্নান। সহযোদ্ধারা চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যে সমাহিত করেন এই বীরের মরদেহ। ৫০ বছর পর স্বজনরা খুঁজে পেয়েছেন সেই কবর।

তারা কবরটি নিজ গ্রামে স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রণায়ে আবেদন করেছিলেন। অনুমতি মিলেছে। কবরটি শিগগিরই আনা হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে।

এই গ্রামেই ১৯৪৮ সালে জন্ম আব্দুল মান্নানের। তিনি ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ও পরে পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইনসে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাটে বিদ্যুতের সাবস্টেশনটি তখন ছিল পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাদের দখলে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন সাবস্টেশনটিতে হামলা করবেন। সামনা-সামনি লড়াই হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ’৭১ সালের ৬ অক্টোবর সুলতান মাহমুদের (বীর উত্তম) নেতৃত্বে আব্দুল মান্নানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা হামলা চালান। রাত তিনটার দিকে শুরু হয় আক্রমণ।

পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। বাঙ্কার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। ‍বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাতে সাবস্টেশনের তিনটি ট্রান্সফরমারেই আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করতে সমর্থ হন।

তবে তুমুল লড়াইয়ের একপর্যায়ে কয়েকটি গুলি এসে লাগে আব্দুল মান্নানের শরীরে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সহযোদ্ধারা তাকে বয়ে নিয়ে যান আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা রাউজানের আবুরখীলে ডাক্তার পরেশ বড়ুয়ার বাড়ি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সহযোদ্ধারা রাউজানের গহিন অরণ্যে ডাক্তার পরেশ বড়ুয়ার বাড়ির আঙিনায়ই তার মরদেহ সমাহিত করেন।

কিন্তু স্বজনদের কাছে এতদিন অজানা ছিল শহিদ এই বীর বিক্রমের সমাধির কথা। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে কবরটি নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। স্বজনরা জানতে পারেন পাহাড়ি এলাকায় গহিন জঙ্গলে অবেহেলায় অনাদরে পড়ে থাকা কবরটি বীর বিক্রম আব্দুল মান্নানের। শুরু হয় করবটি নিজ গ্রামে স্থানান্তরের চেষ্টা। ১ নভেম্বর অনুমতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আবেদন করেন স্বজনরা। মন্ত্রণালয় ৯ নভেম্বর অনুমতি দেয়।

এই বীর শহিদের ছোট ভাই নুরুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের কবর পৈতৃক নিবাসে আনতে পারব, এতে আমরা খুবই আনন্দিত। ভাইয়ের কবরকে প্রশাসনের সহযোগিতায় সুন্দর পর্যটন স্থাপনা হিসেবে গড়ে তুলব। যাতে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে। আমার ভাই মৃত্যুকে পরোয়া করেনি। ভাই দেশের জন্য যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হয়েছিল। এ কথা ভাবলে চোখে পানি আসে, আবার গর্বে বুক ভরে যায়।’

স্থানান্তরিত ওই কবরস্তান স্মৃতিসৌধ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বীর বিক্রম শহিদ আব্দুল মান্নান আমাদের গর্ব। তার কবর স্থানান্তরের জায়গা নির্ধারণ করা হচ্ছে। রোববার জায়গা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, বীর বিক্রম শহিদ আব্দুল মান্নানের কবর তার নিজ গ্রামে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তে তারা আনন্দিত।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘বীর বিক্রম শহিদ আব্দুল মান্নান আমাদের পুলিশ বাহিনীর গর্ব। নানা আয়োজনে তাকে বরণ করে নিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর