বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের চিঠি ‘অনিয়ম ঠেকাতে’

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:০১

তালিকার পাঁচ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দুই জন। বাকিরা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনে অনিয়ম দূর করার তাগিদ থেকেই স্বেচ্ছায় তারা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন। ইসির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তারা বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব কিছু তদন্ত।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (এসজেসি) গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানিয়েছেন ৪২ নাগরিক। তাদের এই চিঠি তৈরি করেছে ব্যাপক আলোচনা, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে আইনি বিতর্কও নতুন করে সামনে এসেছে।

আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেয়া, ইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার প্রেক্ষাপট, সুপ্রিম জুডিশিলায় কাউন্সিলের বিষয়ে ৪২ নাগরিকের অবস্থানসহ বেশ কিছু বিষয় অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

বিষয়টি নিয়ে তালিকার পাঁচ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দুই জন। বাকিরা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনে অনিয়ম দূর করার তাগিদ থেকেই স্বেচ্ছায় তারা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন। ইসির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তারা বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব কিছু তদন্ত।

৪২ নাগরিকের চিঠিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আহ্বান জানানো হলেও সাংবিধানিকভাবে এ ধরনের কাউন্সিলের বিধান এখন বিদ্যমান আছে কিনা- তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

তবে চিঠিতে সই করা সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখনও কার্যকর আছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়ে আদালত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃস্থাপন (রি-স্টোর) করেছেন। সুপ্রিমকোর্ট আমাদের সংবিধানের রক্ষক, রায় রিভিয়ের আবেদন করা হলেও আগের রায়ে আদালতের স্থগিতাদেশ নেই।

‘আমরা তো বহুদিন আগে থেকেই বলে আসছি। তাদের অপকর্মের শুরু থেকেই বলে আসছি। গত জাতীয় নির্বাচনে যখন বিভিন্ন রিপোর্ট এসেছে, সংবাদ সম্মেলন করে তথ্যগুলো তুলে ধরেছি। ২১৩টা কেন্দ্রে শতভাগ ভোট, আওয়ামী লীগের দুটি কেন্দ্রে, বিএনপির ১৭০০ কেন্দ্রে শূন্য ভোট। জাতীয় পার্টির হাজার হাজার কেন্দ্রে শূন্য ভোট। প্রথম আলো পত্রিকায় এ নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট ছিল। কতগুলো আসনে কী ভোট হয়েছে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরে টিআইবিও রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।’

চিঠির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলে আশাবাদী ড. বদিউল আলম।

‘রাষ্ট্রপতির সাড়া না দেয়ার কোনো কারণ নাই। এর আগে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যখন কোনো অভিযোগ এসেছে তারা সম্মানজনকভাবে বিদায় নিয়েছেন। আমরা সম্পূর্ণ সাংবিধানিকভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছি। আর্থিক দুর্নীতি, নিয়োগ দুর্নীতি এসব তুলে ধরেছি। আশ করি রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে এসব আমলে নেবেন।’

চিঠির সঙ্গে ৪২ জন কীভাবে যুক্ত হলেন জানতে তাইলে তিনি বলেন, ‘আমারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও বহু লোককে সংযুক্ত করা যেত। ৪২ একটি ভালো সংখ্যা। এর মধ্যে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি রয়েছেন। অনেকেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও ছিলেন। তবে সংখ্যা কোনো বিষয় না। একজনও যদি কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে তদন্তের দাবি জানান, তাহলে সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।’

মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জানা মতে রাষ্ট্রপতি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আছে কি নেই- সেটি তিনিই ভালো দেখবেন। ’

দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান কীভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের (ইসি) কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত। আপনার বিভিন্ন মিডিয়া এ ব্যাপারে নিউজ করেছেন। মানুষ নির্বাচন দেখছে, এই দুর্নীতির যে অভিযোগগুলো পত্রপত্রিকায় এসেছে- সেগুলো মানুষও দেখেছে আমরাও দেখেছি। এটার উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্তের দাবি জানিয়েছি।’

যারা বিষয়গুলোতে একমত হয়েছেন তারাই চিঠিতে সই করেছেন বলেও জানান নুর খান।

‘আরও মানুষের কাছে গেলে সংখ্যা বাড়ত। আমাদের এই চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পরে অনেকেই স্ব-উদ্যোগে জানতে চাইছেন, অনেকেই যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরা তো সবাইকে আহ্বান জানানোর সুযোগ নাই। এছাড়া এখন যোগাযোগের পরিস্থিতিও সীমিত। সম্মতির ভিত্তিতেই সংখ্যাটি ৪২ হয়েছে।’

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বলবৎ নাই, এটা কোথায় আছে? রিভিউ শুনানির জন্য আছে। এর মানে তো এটা নয় যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল স্থগিত।’

তাৎক্ষণিক উদ্যোগের কারণে চিঠিতে সই করা ব্যক্তির সংখ্য ৪২ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা করলে সংখ্যাটি পাঁচশও হতে পারত। আমরা মূলত ইসিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যই এটা করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে দুর্নীতি করার জন্য নয়।

‘আজকে আমাদেরকে যারা বিএনপির লোক বলছেন, তারাই বিএনপির জামায়াতের লোক। আমি বিএনপির সময়ে জেল খেটেছি। এখন সত্য কথা বললে যদি কারো গায়ে লাগে তাহলে তো কিছু করার নাই। ’

রাষ্ট্রপতি সাড়া না দিলে সবার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান জেড আই খান পান্না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন দেশের ৪২ নাগরিক।

চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের বর্তমান সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত। তারা একদিকে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ। তারা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন করে গুরুতর অসদাচরণ করে চলেছেন।

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ হয়। তবে এ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টের নয় আইনজীবী রিট করেন। এরপর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এরপর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদন এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

এ বিভাগের আরো খবর