বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আবার নির্বাচনের ‘ফেনী স্টাইল’

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৩:০৫

বেগম খালেদা জিয়ার এই জেলায় পৌর নির্বাচনে আগ্রহ নেই বিএনপির। আগামী ১৬ জানুয়ারি হতে যাওয়া একটি পৌরসভায় দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তিনি বলেছেন, কেন্দ্রর কথায় তিনি প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু ভোটের প্রচারে তিনি নেই। অন্য চার পৌরসভায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেই একজনও।

ফেনীর পাঁচটি পৌরসভায় ভোট নিয়ে আমেজ একেবারেই নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলে নেই উৎসাহ। ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহ নেই।

আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে একটি, ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে একটি পৌরসভায় ভোট হবে। অন্য তিন পৌরসভায় ভোট কবে, সেটা এখনও জানায়নি নির্বাচন কমিশন।

এর মধ্যে ১৬ জানুয়ারি দাগনভুঞায় যে ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে বিএনপির কেন্দ্র থেকে এক জনকে প্রতীক দেয়া হলেও ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই দলের প্রার্থীর। জানিয়েছেন, তিনি অনুরোধের ঢেঁকি গিলেছেন। কিন্তু ভোটের ময়দানে নেই।

তৃতীয় দফায় ফেনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনোনয়নের চেষ্টা চালালেও বিএনপির কোনো নেতার ন্যূততম আগ্রহ নেই।

সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম পৌরসভাতে এখনও তফসিল ঘোষণা হয়নি। সেখানেও আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয়। অন্য শিবির একেবারেই শান্ত।

গত এক দশক ধরেই জেলায় বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই চিত্র দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। পাশাপাশি এই জেলাটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ফেনীতে ভোটের ময়দানে দলটির নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতি স্থানীয়ভাবে নির্বাচনের ‘ফেনী স্টাইল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের অন্যত্র জমজমাট প্রচার চললেও ফেনী থাকে একেবারেই নিরুত্তাপ।

দাগনভূঞা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক খান এর আগে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৬ জানুয়ারির ভোটে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

এখানে ধানের শীষ পাওয়া বিএনপি নেতা কাজী সাইফুর রহমান স্বপন পুরোপুরি হাত গুঁটিয়ে বসে। তিনি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

প্রার্থী হয়ে প্রচারে নেই কেন- এমন প্রশ্নে স্বপন বলেন, ‘আমি গতবারও প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু ভোটের শুরুতেই বর্জন করেছিলাম। কারণ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কেন্দ্র দখল করে নেয়। এবার কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে প্রার্থী হয়েছি, কিন্তু প্রার্থী হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না।’

ফেনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের হাজী আলাউদ্দিন এর আগে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি প্রার্থী হতে চান। দলে মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন আরও একজন। তিনি হলেন নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। ফেনীতে আগাম প্রচার কেবল এই দুই জনের।

আলাউদ্দিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো কাজ করি বলে বারবার নির্বাচিত হচ্ছি। দল বা নেতাদের খুশি করে নয়।’

একই কথা বলছেন দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান।

চতুর্থ থেকে পরবর্তী ধাপে ভোট হবে যেগুলোতে, তার মধ্যে আছে পরশুরাম পৌরসভা। এখানকার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল এর আগে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি প্রার্থী হতে চান।

বাম থেকে হাজী আলাউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম খোকন ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল। ছবি: নিউজবাংলা

গতবার তিনি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এবারও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাবেন কি না, এই বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা আছে। কারণ, এখন পর্যন্ত কেউ প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

ছাগলনাইয়া পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা এবারও প্রার্থী হতে চান। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা এটি। তার পরেও দলটির কোনো নেতাই ভোটে আগ্রহী হচ্ছেন না।

এখানে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আর যাদের নাম উঠে আসছে, তাদের সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। এরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন মজুমদার ও সাবেক সভাপতি সামছুদ্দিন মজুমদার ভুলু।

সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনও আবার ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনিও আওয়ামী লীগের নেতা।

এখানেও বিএনপির কেউ ভোটে আগ্রহ দেখাননি এখনও। আওয়ামী লীগ নেতা নুর নবী লিটন ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমাম উদ্দিন সেলিম পাটোয়ারী চেষ্টা চালাচ্ছেন নৌকা প্রতীক পাওয়ার।

ওমর ফারুক খান ও মো. মোস্তফা। ছবি নিউজবাংলা

কী বলছে দলগুলো?

গত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলররা অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেননি, আর যারা ভোটের ময়দানে ছিলেন, তারা সকালেই ভোট বর্জন করেছেন।

ভোটারদের মধ্যেও কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। তাদের অভিযোগ, তারা কেন্দ্রে যেতে পারেন না, ভোট দিতে পারেন না।

ফেনী পৌরসভার রামপুরের বাসিন্দা সাব্বির আহম্মদ বলেন, ‘ভোটের প্রচলন হারিয়ে গেছে অনেক আগে। নির্বাচন, ভোট এসব এখন উপহাস। ভোটাররা ভোট দিতে পারে না। সেজন্য কবে ভোট, কারা প্রার্থী এসব বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে। তাই বিএনপির কোনো উত্তেজনা আগ্রহ নেই। কারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করে ভোট নিয়ে যায়। সে জন্য বিএনপি প্রার্থীদের আগ্রহ কম। শুধু আওয়ামী লীগের উত্তেজনা আগ্রহ রয়েছে। কারণ তারা নির্বাচিত হবে এটি তাদের জন্য সুনিশ্চিত।

‘আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেলেই তিনি মেয়র হয়ে যান। তাদের জন্য আরও একটি বাড়তি সুবিধা হয়েছে সব পৌরসভায় একসঙ্গে ভোট হবে না। জেলার সরকারদলীয় ক্যাডাররা একটি পৌরসভায় কেন্দ্র দখল করতে সুবিধা পাবে।’

জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এসব তামাশার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কী লাভ? শুধু শুধু আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখানোর দরকার কী? কারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গত ১২ বছর কাউকে ভোট দিতে দেয়নি; সবই তারা নিয়ে যায়।’

ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোতায়ের হোসেন চৌধুরী রাশেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে যায় সেজন্য অনেকে প্রার্থী হতে আগ্রহ হারায়।’

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেশি। যার কারণে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না।’

কেন্দ্র দখল বা বিরোধীদেরকে ভোটে বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নিজাম হাজারী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি কিংবা কেন্দ্র দখল করে না। বিএনপি কিংবা অন্য দলে যারা রয়েছে তারা প্রার্থী দেয়ার মতো লোক খুঁজে পায় না। যার কারণে তারা এসব আবোলতাবোল কথা বলছেন।’

রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সাবেক বিএনপি নেতা তাজুল ইসলাম মনে করেন ‘মেয়র পদ’ ভোটার কিংবা নাগরিকদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদ হলেও এগুলো প্রত্যেকটি দলীয় পদ হয়ে গেছে।

রাজনীতি ছেড়ে দেয়া আরেক নেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফেনীতে সরকারি দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তিনি হয়ে যান ভোটবিহীন জনপ্রতিনিধি। সেজন্য প্রার্থীদের কাছে ভোটাররা মূল্যহীন। সব গুরুত্ব দলীয় নেতাদের।’

ফেনীর প্রবীণ রাজনৈতিক রহুল আমীন বলেন, ‘মেয়র পদগুলো তাদের পারিবারিক বা দলীয় পদ হয়ে গেছে। নির্বাচনে সত্যিকারের ভোট প্রথা চালু থাকলে হয়তো এমনটি হতো না। ভোটারদের ভোট না পেয়েও কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি করে তারা হয়ে যায় মেয়র নির্বাচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর