কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতকে বরখাস্ত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর পাঠানো একটি বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়।
ব্রিটিশ বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে ২৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া কলেজ রোডে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
সেখানে এস পি তানভীর বলেন, ‘আমার পরিবারের সবচেয়ে গবেট, পড়ালেখা কিছুই জানে না, সেটাকে আমি মাদ্রাসায় পাঠাই...আপনি যদি বাংলাদেশের সংবিধান, আইন না মানেন তাহলে আপনার কাছে তিনটা অপশন আছে। এক, উল্টাপাল্টা করবেন, হাত ভেঙে দিবো, জেল খাটতে হবে। দ্বিতীয় অপশন হচ্ছে, একেবারে চুপ করে থাকবেন।
‘বাংলাদেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। চুপ করে নিজের জীবনযাপন করবেন। আর তিন নম্বর হলো যদি আপনার বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইওর পেয়ারা পাকিস্তান।’
হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়, কুষ্টিয়ার এসপি তানভীর আরাফাতের তথাকথিত মৌলবাদের কথা তুলে হাত ভেঙে দেয়ার হুমকি সরকারি পোশাকে গণবিরোধী মাস্তানি। পুলিশের দায়িত্ব অপরাধ ঠেকানো এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় পাঠানো; বিচার করবে আদালত। কিন্তু পুলিশ কোনো অপরাধীর হাত ভেঙে দিতে পারে না বা কোনো অপরাধীকে বিনা বিচারে জেল খাটাতেও পারে না।
সরকারের কাছে তারা অবিলম্বে ওই এসপিকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আমরা মনে করি, ভাস্কর্য ভাঙার মতো এ ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে আলেম-ওলামার ওপর দায় চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে মৌলবাদ ও ধর্ম ব্যবসার জিকির তুলে আলেম সমাজকে ছোট করার সংঘবদ্ধ প্রপাগান্ডা চলছে, যার পরিণতি কখনোই ভালো হবে না। যতই ক্ষমতা থাকুক, আল্লাহর গজব আসলে দুনিয়ার কোনো ক্ষমতা দিয়েই তা ঠেকানো যাবে না।’
১৭ ডিসেম্বর রাতে কোনো এক সময় কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ে হাতুড়ি দিয়ে বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়।
এ মামলায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান, সবুজ হোসেন ও হৃদয় আহমেদ।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে রাতের আঁধারে ভাঙচুর করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। সেই ঘটনাটি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। আর ফুটেজ পর্যালোচনা করে স্থানীয় ইবনি মাসউদ কওমি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আদালতে চার জনই এর দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা ফয়জুল করীমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করেছে।