দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া কোনটিতেই নেই বৈরী আবহাওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামার প্রযুক্তি ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম বা আইএলএস। যে তিনটি বিমানবন্দরে এ প্রযুক্তি আছে তাও পুরোনো। ফলে ঘন কুয়াশা কিংবা ঝড়-বৃষ্টির কারণে দৃষ্টিসীমা কমে এলেই বিঘ্নিত হয় উড়োজাহাজ চলাচল।
এমন বাস্তবতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী বছরের মধ্যেই যেকোনো পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামার সক্ষমতা অর্জনের প্রযুক্তি সংযুক্ত হবে দেশের সব বিমানবন্দর।
সাধারণত বৈরী আবহাওয়া কিংবা ঘন কুয়াশার কারণে পাইলট খালি চোখে রানওয়ে দেখতে না পারলে নিরাপদ অবতরণের জন্য বিমানবন্দরগুলোতে আইএলএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইলটকে এক ধরনের বেতার তরঙ্গ পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে সহজেই রানওয়ের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন পাইলট।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস আছে, তার দৃষ্টিসীমা ৬০০ মিটার। শীতকালে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই বিমানবন্দরের রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ৫০ থেকে শূন্য মিটার পর্যন্ত। ফলে পুরোনো আইএলএস দিয়ে ফ্লাইট ওঠানামা করানোয় বিঘ্ন ঘটছে।
কখনো কখনো উড়োজাহাজগুলোকে নিরাপদ অবতরণে পাঠানো হচ্ছে বিকল্প বিমানবন্দরে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে এয়ারলাইন্সগুলো।
বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং ও পিআর বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘন কুয়াশার জন্য কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, একইভাবে এয়ারলাইন্সও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
‘শীতকালে সকালে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, পাঁচ থেকে ছয়টি ফ্লাইট সময়মতো ছাড়া যাচ্ছে না। এর প্রভাব কিন্তু পরবর্তী সারাদিনই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। একটি ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়লে অন্যগুলোতেই কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কমে যাওয়ায় বিদেশগামীদের ক্ষেত্রে সমস্যা কম হলেও বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের যাত্রীরা।
‘অনেকেই ব্যবসায়িক নানা প্রয়োজনে আকাশপথে ভ্রমণ করে থাকেন। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে তিনি কিন্তু ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার সময়মতো ফ্লাইট ছাড়তে না পারায় এয়ারলাইন্সেরও কিন্তু বদনাম হচ্ছে’, বলেন কামরুল।
‘অনেক সময় দেখা যাচ্ছে ঢাকায় কুয়াশা নেই, ফ্লাইট সময়মতোই ছাড়া হলো। কিন্তু সৈয়দপুরে ঘন কুয়াশা। সেখানে নামা যাচ্ছে না। ফলে কিন্তু সেই ফ্লাইটটি আবার ঢাকায় ফিরে আসছে। এতে করে এয়ারলাইন্সের ওপর একটি খরচের বোঝা চাপল’, যোগ করেন তিনি।
কামরুল জানান, অনেক সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোকেও ঘনকুয়াশার কারণে দেশের ভেতর অথবা বাইরে বিকল্প বিমানবন্দরে নামতে বলা হয়। এতে সেই ফ্লাইটের যাত্রীদেরও পোহাতে হয় ভোগান্তি।
আইএলএস প্রযুক্তির মানোন্নয়ন না হওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইএলএসের সাথে থাকতে হবে অ্যাপ্রোচ লাইটিং সিস্টেম। এ দুটো নিশ্চিত করা গেলে যেকোনো পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ ওঠানামা করতে পারবে।
‘তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস প্রযুক্তি রয়েছে তা ক্যাটাগরি এক। এটি ৬০০ মিটার পর্যন্ত উড়োজাহাজ ওঠানামায় সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যেকোনো পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ ওঠানামা করাতে হলে আইএলএস তিন ক্যাটাগরি লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ক্যাটাগরি-৩ আইএলএস প্রতিটি বিমানবন্দরে স্থাপন করা প্রয়োজন। শূন্য দৃষ্টিসীমা থাকলেও এর সাহায্যে উড়োজাহাজ ওঠানামা স্বাভাবিক রাখা যায়।’
বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, এরই মধ্যে দেশের সব বিমানবন্দরে আইএলএস স্থাপন করতে দরপত্র আহ্বান করেছে তারা।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মহিবুল হক নিউজবাংলাকে জানান, ২০২১ সালের মধ্যে সব বিমানবন্দরেই বসছে আইএলএস।
তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সের থ্যালাসের কাছ থেকে যে নতুন রাডার নিচ্ছি, সেটার সাথে তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের জন্য আইএলএস প্রযুক্তি স্থাপন করে দেবে।
‘প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন, শুধু আন্তর্জাতিক নয় বাংলাদেশের প্রত্যেক বিমানবন্দরে যেন এই সিস্টেমটা থাকে। অন্য বিমানবন্দরগুলোতে এটা করার জন্য আমরা এরই মধ্যে দরপত্র দিয়েছি। আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে এগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’
এগুলো স্থাপন হয়ে গেলে আগামী বছরই দেশের সব বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টা উড়োজাহাজ চলাচলের সক্ষমতা অর্জন করবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।