চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন। এ কারণে হাসপাতালটিতে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. রিদসানুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে মেডিক্যালের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিউ) ওয়ার্ডে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শহিদুল ইসলাম তিনটি ছাড়পত্র নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। ওই সময় সিরিয়াস রোগী দেখছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক দিলারা পারভীন দোলা। শহিদুল বারবার ছাড়পত্রে স্বাক্ষরের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিলেন।
ডা. রিদসানুল আরও বলেন, ‘এ সময় ডা. দিলারা শহিদুলকে জানান, আপনি বাইরে অপেক্ষা করেন, আমি আসছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শহিদুল বলেন, আমাকে পরিচালক স্যারও বাইরে অপেক্ষা করতে বলে না আপনি কে? এই বলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।’
‘পরে ডা. দিলারা বিষয়টি আমাদের জানান। আমরা উপপরিচালককে জানাই। তারা শনিবার ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের জানায়। আমরা চলে আসি।’
রিদসানুল বলেন, ‘আমরা চলে আসার পর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শহিদুল ফের করোনারি কেয়ার ইউনিটে গিয়ে ডা. দিলারাকে হুমকি দিয়ে আসেন। এ ঘটনায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের নিরাপত্তার জন্যই এই আন্দোলন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিচালক স্যারকে বলেছিলাম, শুধু শহিদুল আর আমাদের নিয়ে বসেন। কী হয়েছে শুনে শহিদুল অপরাধ করলে শুধু স্যরি বলবেন, কিন্তু এই কাজটি পরিচালক স্যার করছেন না।’
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ডাক্তারকে তো হুমকি দিইনি। বরং আমি অনুরোধ করেছি যে এক জন রোগী সকাল থেকে অপেক্ষা করছে, যেন ওই রোগীকে দ্রুত ছাড়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু সেটা ডাক্তার উল্টা ভেবেছেন।’
এদিকে, শুক্রবার হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা গেছে, কোনো ওয়ার্ডেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নেই।
রোগী ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার রাত থেকে চিকিৎসকরা আসছেন না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স রোখসানা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, তারা রাতে জানতে পারেন সকাল থেকে কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে আসবেন না।
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা দোয়ানী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন আব্দুর রাসেল রতন। তিনি ভর্তি আছেন বার্ন ইউনিটে। শুক্রবার সকাল থেকে তাকে কোনো চিকিৎসক দেখেননি বলে অভিযোগ করেন রতনের মা রেখা বানু।
তিনি বলেন, ‘হামার ছৈল ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে। বিয়েন থাকি কাইও আইসে নাই। দুপরে ইনজেকশন দেওয়ার কতা আচিল, দেয় নাই। কাকো ডাকি পাবার নাকছি না। হামার ছৈল খুব কষ্ট পাচ্ছে।’
রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে আসা আব্দুল বাতেন ভর্তি আছেন লিভারের সমস্যা নিয়ে। শনিবার তার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার ফলোআপের জন্য কোনো চিকিৎসক আসেননি, অভিযোগ ছোট ভাই রউফুল ইসলামের।
রউফুল বলেন, ‘সকাল থেকে কোনো ডাক্তারকে আমরা দেখিনি। এক জন রেজিস্ট্রার ডাক্তার ছিলেন। তিনি একবার ঘুরে গেছেন। ভাইয়ের খুব ব্যথা উঠছে। ডাক্তার না থাকলে কাকে কী বলি?’
তিনি বলেন, ‘ওদের (চিকিৎসক) ধর্মঘটের জন্য তো আমরা এত কষ্ট করতে পারি না। এটা তো সরকারি হাসপাতাল। আমরা চাই আমাদের চিকিৎসা।’
হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে আছেন নুর ইসলাম। তিনি ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে ভুগছেন। তার সঙ্গে থাকা ছোট ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কোনো ডাক্তার নাই। নার্সদের বললে তারা বলে, আমরা তো ডাক্তার না। ডাক্তার ওষুধ দিবে, আমরা সেগুলো ব্যবহার করাব রোগীদের। পরে উপায় না পেলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে এক ডাক্তার পাই, তার কাছে ওষুধ লিখে নিয়ে এসে খাওয়াইছি। ডাক্তার না পেলে তো আমাদের অন্য কোনো উপায় নাই।’
হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রোস্তম আলী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। শনিবার বৈঠকে বসা হবে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’