দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নৌকা আর বিএনপির ধানের শীষের দুই প্রার্থীর পাশাপাশি আলোচনায় উঠে এসেছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদের একজন টানা দুইবারের মেয়র। আর যেই জিতুক, তিনিই মূল লড়াইয়ে থাকবেন, এটা নিশ্চিত।
প্রায় তিন যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভায় টানা দুই বার মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন কয়লা খনিবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুরতুজা সরকার মানিক। তিনি এবার তৃতীয় বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন। টানা তৃতীয় জয়ে তিনি হ্যাটট্রিক করতে চান।
এবার মেয়র পদে প্রার্থী চারজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাজা মইন উদ্দীন, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির শাহাদৎ আলী, জগ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মরতুজা সরকার মানিক ও খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদ আলম লিটন।
মূল লড়াই কার মধ্যে হবে, সেটা ভোটের আগে জানা কঠিন। তবে দলীয় রাজনৈতিক শক্তির বাইরে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার নিয়ে আগ্রহ আছে সেখানে।
১৯৮৩ সালে গঠন হয় এই পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এই পৌরসভার মোট আয়তন ১৩ দশমিক ৫৯ বর্গ কিলোমিটার। এই পৌরসভায় গত ১০ বছরের মধ্যে ‘গ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। আর ওই সময়টাতে মেয়রের দায়িত্ব করেছেন মানিক।
গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত এই পৌরসভায় পাকা রাস্তা নির্মাণ হয়েছে ৯৩.১৫ কিলোমিটার, পাকা ড্রেন নির্মাণ হয়েছে ৫৪.৪৩ কিলোমিটার, কাচা ড্রেন নির্মাণ হয়েছে ৫১.৬০ কিলোমিটার, পাইপ ড্রেন নির্মাণ হয়েছে ৫২২ কিলোমিটার, কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে আটটি।
এ ছাড়া তারাপাম্প স্থাপন হয়েছে ৬২টি, টিউবওয়েল স্থাপন হয়েছে ৭৮৩টি, সড়কবাতি কাভারেজের পরিমাণ ৪৪.৪৪ কিলোমিটার, সড়কবাতি কাভারেজের হার ৮৭ শতাংশ। এই পৌরসভাটি ‘গ’ থেকে খি’ শ্রেণিতে উন্নীত হয় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ এবং ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয় ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর।
মুরতুজা সরকার মানিক পরিচিতি পান ২০০৬ সালে। ওই সময়ে ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই আন্দোলনে যে সাফল্য এসেছিল তাতে ভূমিকা রয়েছে তারও।
২০০৯ সালের নির্বাচনে প্রথম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মানিক বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। পরের নির্বাচনেও জয় পান তিনি।
নিউজবাংলাকে খনিবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমি প্রথম যখন নির্বাচিত হই তখন আমি এই পৌরসভার জন্য একটি মাস্টারপ্লান তৈরি করি। সেই পরিকল্পনার আলোকে কাজ শুরু করি।
“গত ১০ বছরে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা থেকে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় রূপান্তরিত করেছি। আমার মাস্টার প্লানের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আমার আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আগের কোন মেয়র করতে পারেন নাই। আমি নির্বাচিত হলে মাস্টার প্লানের বাকি কাজগুলো শেষ করব। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে আমি আশা করি।”
তবে বাজিমাতের আশায় আওয়ামী লীগের খাজা মইন উদ্দীন। তার দাবি, এলাকা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। সেই উন্নয়নের ছোঁয়া দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পড়েছে। কিন্তু গত দুইবারের মেয়রের কারণে ফুলবাড়ীর মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। আমি মেয়র পদে নির্বাচিত হলে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া ফুলবাড়ীর সকল জনগণের মাঝে পৌঁছে দেব।’
ফুলবাড়ী পৌরসভা। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপির প্রার্থী শাহাদৎ আলী বলেন, ‘মরতুজা সরকার মানিক ১০ বছর ধরে মেয়র পদে রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু সফলতা, কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। তিনি হয়তো মানুষের খুব কাছে যেতে পারেননি, বা যেতে পেরেছেন। তবে আমি নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করব।’
প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েই আলোচনায় এসেছেন মাহামুদ আলম লিটন। তার একটি খাদ্যপণ্যের কারখানা রয়েছে, পাশাপাশি ঠিকাদারিও করেন। তিনি নিজে রাজনীতি না করলেও তার বড়ভাই খুরশীদ আলম মতি উপজেলা বিএনপির সভাপতি। খুরশীদ আলম এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর দলের প্রার্থীর বদলে ভাইয়ের হয়ে কাজ করে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি।
লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নাগরিক সুবিধা আরও বাড়াব। তাই জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
পৌর শহরের সুজাপুর গ্রামের আব্দুল জলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বারের মেয়রের সময় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই পৌরসভায় আরও উন্নয়ন দরকার। তাই যে মেয়র নির্বাচিত হোক না কেন, তার কাছে আমাদের পৌরসভার উন্নয়ন করবে বলে আমি আশা করি।’
শহরের ভ্যান চালক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তবে কিছু কিছু জায়গার রাস্তাঘাটের আরো উন্নয়ন দরকার। তাহলে আমরা ভ্যান চালিয়ে আরাম পাব।’
এই পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৫২ জন ও মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৩৭৯ জন। ২৮ ডিসেম্বর এই পৌরসভায় মোট ১০টি ভোট কেন্দ্রের ৯৪টি বুথে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে।