জামালপুর জেলার একমাত্র আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা। সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে হানাদার মুক্ত করা মানুষটি আজ বড় অর্থনৈতিক সংকটে। শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণঘাতী ক্যানসার। কিন্তু টাকার অভাবে করাতে পারছেন না উপযুক্ত চিকিৎসা।
জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা দিঘলাকোনা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবেন্দ্র সাংমা। স্ত্রী মিলন দাংগো ও ডিগ্রিতে পড়ুয়া ছেলে জয় দাংগোকে নিয়ে ছোট সংসার তার।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় এবেন্দ্র সাংমা ১৯ বছরের কিশোর। সারাদেশে যখন যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে তখন বাবা জাংবান মারাকের কাছে অনুমতি নিয়ে চলে যান পার্শ্ববর্তী ভারতে। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধে।
প্রথমে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা এবং পরে জামালপুর জেলার ঐতিহাসিক কামালপুরে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবেন্দ্র। টানা নয় মাস যুদ্ধ শেষে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেন দেশকে।
জীবন বাজি রেখে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা এবেন্দ্র সাংমা ভুগছেন লিভার ক্যানসারে। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে করাতে পারছেন না যথাযথ চিকিৎসা।
এবেন্দ্র সাংমার ছেলে জয় দাংগো নিউজবাংলাকে জানান, তার বাবা প্রথমে পেটে ব্যাথা অনুভব করছিল। স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসার পর তা ভালো হচ্ছিল না। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে নেয়া হলে ধরা পড়ে লিভার ক্যানসার।
চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন জয় দাংগো- ‘আমাদের গরীবের সংসার। মাত্র ২৫ শতাংশ কৃষি জমি আছে। এটা চাষাবাদ করেই চলি। বাবা যে ভাতা পায় সেটা দিয়েও চলে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা টাকা কোথায় পাব।
‘একবার ইউএনও মেডাম আইসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই খবর নেই ইউএনও মেডাম। সেটা দিয়ে কিছুদিন ঔষধ কিনে খাওয়াইছি। এখন আর কোনো টাকাই নাই। ঔষধ তো দূরের কথা ভাত খাওয়ার টাকা আমাদের কাছে নেই।’
জয় দাংগোর দাবি এই বিজয়ের মাসেও তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার খবর নেয়নি কেউ। বর্তমান যে অবস্থা তাতে সহায়তা চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে জানান তিনি।
‘বিজয়ের মাসে সারাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে। আমার বাবাও এই দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করছে। আমার বাবাকে কেউ স্মরণ করে না। এই বিজয়ের মাসে কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা আমার বাবার চিকিৎসার জন্য সহায়তা করতো তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।’
এবেন্দ্র সাংমার স্ত্রী মিলন দাংগো নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জয়ের বাবার অবস্থা খুব খারাপ। হাঁটা চলা করতে পারে না। কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। খুবই কম খায়। এখন আঙ্গর কাছে টাকাও নাই যে একটু চিকিৎসা করমু। কেউ যদি একটু সাহায্য করত তাহলে অনেক উপকার হইত।’
এ ব্যাপারে বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা নিউজবাংলাকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা সমাজ কল্যাণ অধিদফতর থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ ও ঢাকায় এবেন্দ্র সাংমার চিকিৎসা চলাকালীন উপজেলা প্রশাসন তাকে সার্বিক সহায়তা করেছে দাবি করে তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন সবসময় তার পাশে আছে।