বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘হাতিরঝিলের ক্যান্সার’ দূর হতে আরও তিন মাস

  •    
  • ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:৩১

হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ৭০ শতাংশ ভাঙা হয়ে গেছে। মার্চের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হলে হাতিরঝিলের ক্ষত হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটির আর কোনো চিহ্ন থাকবে না।

কংক্রিটের মেঝে ও স্তম্ভে প্রবল শব্দে পড়ছে হাতুড়ির ঘা। হাতুড়ি আর ড্রিল মেশিন নিয়ে ব্যস্ত শতাধিক শ্রমিক।

এক সময় পাশের ঝিলের পানিতে ছায়া পড়ত নীলচে কাচের এই ভবনটির। এখন আর আর তা পড়ে না। কারণ ১৬তলা সুউচ্চ ভবনের এখন দাঁড়িয়ে আছে মাত্র পাঁচ তলা। সেই পঞ্চম তলারও অনেকখানি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ৭০ শতাংশ ভাঙা হয়ে গেছে। মার্চের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হলে হাতিরঝিলের ক্ষত হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটির আর কোনো চিহ্ন থাকবে না। এটি ভাঙতে খরচ হচ্ছে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস নিজউবাংলাকে জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে হাতিরঝিলের লেক প্রতিবন্ধকতামুক্ত হবে। সৌন্দর্যবর্ধন পরবর্তী কাজ সম্পাদনের জন্য হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করা হবে। আর এর মধ্যদিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ শতভাগ বাস্তবায়িত হবে।

২০০৬ সালে জলাধার আইন ভেঙে অবৈধভাবে হাতিরঝিল লেকের একাংশ ভরাট করে ১৬তলা ভবনটি গড়ে ওঠে। ২০১০ সালে এটি জলাধার আইন ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয়। আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবন ক্যান্সারের মতো। যদি ভবনটি অবিলম্বে সরানো না হয়, তবে এটি হাতিরঝিল নয়, পুরো ঢাকা শহরের ক্ষতি করবে।’

এই রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল বিভাগ আবেদন করলেও আদালত রায় পরিবর্তন করেনি। তবে দুই দফায় সময় বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে ওই বছরের ১৬ এপ্রিল রাজউক ভবনটি সিলগালা করে।

এরপর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ পায় চট্টগ্রামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত ভবন ভাঙার কাজ।

পুরোদমে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি। তবে মাত্র দেড় মাসের মাথায় করোনার কারণে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের প্রভাব পড়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজেও। টানা চার মাস বন্ধ থাকার পর জুলাইয়ের শেষ দিকে শুরু হয় আবার ভাঙার কাজ।

ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ সেখানে ঘুরে জানা গেছে, ১৬তলা ভবন এখন ভাঙতে ভাঙতে পাঁচ তলায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে সুউচ্চ বিজিএমইএ ভবনের টপ ফ্লোর ভাঙতে। এ ফ্লোরে ছিল বিলাসবহুল সুইমিংপুল, যা ভাঙতেই লেগে যায় দুই মাস।

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কালাম আজাদ বাবুল নিউজবাংলাকে জানান, এতো বড় এবং অত্যাধুনিক ভবন ভাঙার কাজ এর আগে তারা কখনও করেননি। ১৬তলা ভবনটি ভেঙে পাঁচতলায় নামিয়ে আনা পর্যন্ত কোনো শ্রমিকের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ভবন ভাঙার কাজ অনেক প্রলম্বিত হয়েছে। আমরা যত দ্রুত ভাঙা শেষ করতে পারব, আর্থিক খরচও আমাদের তত কম হবে। তা সত্ত্বেও কিছুটা সময় লাগছে, যা আমাদের ইচ্ছেকৃত নয়। অত্যাধুনিক ভবন এবং এর প্রতি ফ্লোরের অবকাঠামোয় কেমিক্যালের ব্যবহার খুব বেশি হওয়ায় ভাঙতে গিয়ে হাতুড়ি ও ড্রিল মেশিন চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ‘এ কারণে শ্রমিকেরা হ্যামার মেশিন হাতে চালিয়ে কাজ করছেন। এ কাজ অনেক পরিশ্রমসাপেক্ষ। ফলে একজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতে পারছেন না। এত কিছুর পরও আমরা কিন্তু সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের কাছাকাছি পথেই হাঁটছি। আশা করছি, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

ভবন ভাঙার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার (ফিল্ড সুপারভাইজার) মনসুর জানান, পরিকল্পনা ছিল শক্তিশালী স্ক্যাভেটর দিয়ে ভবন ভাঙা হবে। কিন্তু এর জন্য ভবনের উপরে হ্যামার গাড়ি ওঠানো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ অত্যাধুনিক ভবন হলেও এতে গ্রেট বিমের সংখ্যা ছিল খুবই কম। ফলে বিকল্প পথ হিসেবে দেশীয় পদ্ধতিতেই ভাঙার কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতি ফ্লোরে স্ক্যাভেটর ওঠানো গেলে একটি ফ্লোর ভাঙতে বড় জোর ১০ দিন সময় লাগতো। সেটি সম্ভব না হওয়ায় এখন লাগছে ১৫ থেকে ১৮ দিন। আমরা এখন পাঁচতলায় রয়েছি। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে ভবনের চারতলার ফ্লোর ভাঙার কাজ শুরু হবে।’

গত মঙ্গলবার হাতিরঝিলে গিয়ে দেখা যায়, ২০টি হ্যামার ও ড্রিলিং মেশিন দিয়ে ভবন ভাঙার কাজ চলছে। প্রতিদিন ১১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

শ্রমিকেরা হেলমেট, সেফটি বেল্ট, সেফটি স্যু এবং হ্যান্ড গ্লাভস পরে অনবরত হ্যামার ড্রিল মেশিন দিয়ে রড আর কংক্রিটের ফ্লোর খুঁড়ে চলেছেন। আরেকটি দল ফ্লোর খুঁচিয়ে আলগা করা কংক্রিট হেভিওয়েট হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়োগুঁড়ো করে ফেলছেন নিচের ফ্লোরে।

এভাবেই চলছে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ। আর ভবন ভাঙার রাবিশ ছয়টি ট্রাকে করে প্রতিদিন রাত ৯টার পর থেকে ভোর ৫টার মধ্যে অপসারণ করা হচ্ছে।

শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলছে ভাঙার কাজ। কাজ তদারক করছে রাজউক, বুয়েট ও সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম। তারা কিছু দিন পরপর ভাঙার অগ্রগতি পরিদর্শনে আসছেন।

কাজ শুরুর প্রথম দুই মাসের মধ্যে পুরো ভবনের চার পাশে সাঁটানো গ্লাসসিট এবং আউট ফিটিং অপসারণ করা হয়। তারপর ভবনজুড়ে পড়ে থাকা ডাস্ট অপসারণ করা হয়।

ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে পুরো ভবন ভাঙার জন্য ছয় মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়। তবে এখন এক বছর চলছে। আরও ছয় মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু রাজউক এ আবেদনের বিপরীতে তিন মাস সময় বাড়ানোর (মার্চ পর্যন্ত) আশ্বাস দিয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, বিজিএমইএ ভবনের মাটির নিচে আছে আরও দুটি ফ্লোর। এর নিচে ভবনের বেসমেন্ট বা ভিত্তি। এই বেজমেন্ট ভাঙার কাজ অনেক কষ্টসাধ্য। তা অপসারণে স্ক্যাভেটর ব্যবহার ছাড়া উপায় নেই। এসব কারণে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ সংশ্লিষ্টরা আরও এক মাস (এপ্রিল পর্যন্ত) সময় হাতে রাখতে চান।

এ বিভাগের আরো খবর