খাগড়াছড়িতে এক অনুষ্ঠানে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেও চলে আনুষ্ঠানিকতা। ধীরে ধীরে দেশের সব জেলাতেই দেয়া হবে এই পাসপোর্ট।
দেশের ছয় জেলায় একযোগে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। খাগড়াছড়ি সদরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় শুরু হয় এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যুক্ত হয়ে সেখানেও ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে মাধ্যমগুলো রয়েছে তার একটি এই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। এটি যেন বিশ্বমানের হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
‘এই পাসপোর্ট সারা বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদ। এটি ১০ বছরের জন্য ইস্যু করা হবে।’
পাসপোর্ট পেতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট দেশের বাইরে আমাদের সম্মান বাড়াবে। আমাদের প্রবাসীরা এখন বিদেশের বিমানবন্দরের ই-গেইট ব্যবহার করতে পারবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামীতে ঘরে বসে অনলাইনে এই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে। পরে ফিংগার প্রিন্ট, চোখের ইমপ্রেশন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দিতে হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপজাতীয় শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহীদুজ্জামানসহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।
http://www.dip.gov.bd/ ওয়েবসাইটে অথবা https://www.epassport.gov.bd/landing অ্যাড্রেসে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন ই-পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
দেশে ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন দেশের প্রথম ই-পাসপোর্ট।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও চলবে। এই মুহূর্তে ছয় মাসের বেশি মেয়াদ রয়েছে এমন এমআরপিধারীদের ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে না। মেয়াদ শেষে এমআরপি নবায়নের জন্য আবেদন ও নির্ধারিত ফি জমা দিলেই তারা পাবেন ই-পাসপোর্ট।
বর্তমানে এমআরপি বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের বইও একই রকমের থাকবে। তবে যন্ত্রে পাসপোর্টের বইয়ে প্রথমে যে তথ্য সংবলিত দুইটি পাতা থাকে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে পালিমানের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। তাতে থাকবে একটি চিপ, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
ডাটাবেজে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ থাকবে। ফলে যেকোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারীর সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবে।
ফলে এই পাসপোর্টধারীরা ই-গেট ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে দ্রুত তাদের ইমিগ্রেশন হয়ে যাবে।
নারায়ণগঞ্জের অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে আমরা আধুনিক বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম। বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। পাশাপাশি কমবে পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনাও।’
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত পরিচালক কর্নেল জুলফিকার, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মাহমুদুল হাসান, সহকারি পরিচালক মিজানুর রহমানসহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।
চাঁদপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় এই সেবা চালু করা হবে। এতে বিদেশ ভ্রমণ ঝামেলামুক্ত হবে। বর্তমানে এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু থাকলেও ভবিষ্যতে শুধু ই-পাসপোর্টই দেয়া হবে।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক ছফি উল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রকৌশলী লে. কর্নেল রাইয়ান তারিক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন চাঁদপুর জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ মৃদুল ভূইয়া।
‘নির্বাচনী অঙ্গীকরে ডিজিটাল হলো দেশ/মুজিব বর্ষেই-পাসপোর্ট ধন্য বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটিতে চালু হয়েছে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম।
রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহিদুল হক বলেন, সেবা দিতে প্রথম প্রথম কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এ জন্য সেবাপ্রার্থীদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ অলিউল্লাহ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান, স্কোয়ার্ড লিডার মেহেরান আলি, আইনজীবী প্রতীম রায় পাম্পু, প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেলসহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।
কক্সবাজার ও বান্দরবানেও এই পাসপোর্ট উদ্বোধন করা হয় ঘটা করে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি সৈকত দেওয়ান, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন , রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি সুপ্রিয় চাকমা, চাঁদপুর প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের, কক্সবাজার প্রতিনিধি সাকিবুল রহমান ও বান্দরবান প্রতিনিধি কিকুউ মারমা।