বেলা সাড়ে বারোটা। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট নম্বর বিজি-৯৯৯। দুবাইগামী এই উড়োজাহাজে মাত্র যাত্রীরা তাদের আসন গ্রহণ করেছেন।
হঠাৎ ফোন আসে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার ও পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ তৌহিদুল আহসানের কাছে। হুমকি দিয়ে বলা হয়, দুবাইগামী উড়োজাহাজে বোমা আছে, যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটবে!
নাম পরিচয় জানার আগেই সংযোগ বিছিন্ন করে দেন হুমকিদাতা।
বিমানের ককপিটে থাকা পাইলটকে জানানো হলো, বিমানে একটি লাগেজে বোমা আছে। শুরু হয়ে গেল বোমা নিষ্ক্রিয় করার তোড়জোড়।
বিমানবন্দর পরিচালক বিষয়টি জানালেন বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী, ডিএমপি ও এপিবিএনসহ সংশ্লিষ্টদের।
বিমানবন্দরের দায়িত্বে থাকে সকল নিরাপত্তা ইউনিউ সতর্ক হয়ে উঠে। বিমান বাহিনীর চৌকস বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিট চলে আসলো ঘটনাস্থলে।
নাটকীয় এই ঘটনার সাক্ষী হল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি সত্যি ঘটনা নয়। তবে এমন কিছু হলে কী করা হবে, চলছিল সেই মহড়া।
নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে কোনো ঘাটতি আছে কি না, তা দেখতে ‘বিমানবন্দর নিরাপত্তা অনুশীলন’ নামে এ মহড়া শুরু হয় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেশন রুলস অনুসারে প্রতি দুই বছর পর পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে মহড়া করতে হয়।
এতে বিমানকে ঘিরে তৈরি হয় নিরাপত্তা বলায়। জরুরি অ্যাম্বুলেন্সসহ চারপাশে নিরাপত্তা কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকে।
প্রথমে এক এক করে বের করে নিয়ে আসা হয় যাত্রীদের। তাদেরকে আলাদাভাবে তল্লাশি করার জন্য নিয়ে আসা হয় বিমানবন্দরের একপাশে। এরপর নেমে আসেন পাইলটসহ অন্য ক্রুরা।
বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের দুইজন সদস্য বিমানের মধ্যে প্রবেশ করেন। বিমানের ভেতরে ও বাইরে বোমা খুঁজতে থাকেন তারা।
বিমান থেকে নামতে গিয়ে আহত হন দুইজন যাত্রী। তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বিমান বাহিনীর মেডিক্যাল সুবিধাসম্পন্ন হেলিকপ্টার এসে পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের।
ইতিমধ্যে বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের সদস্যরা বিমান থেকে বোমাসহ একটি লাগেজ উদ্ধার করে তা নিয়ে নীচে নেমে আসে। বোমাসহ লাগেজকে কেন্দ্র করে চারপাশে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। একটু সময় নিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয় বোমা।
বোমা নিষ্ক্রিয় করার পর বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকা নিরাপদ কি না তা খতিয়ে দেখতে ডিএমপি ও র্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে বিমান ও পার্শ্ববর্তী এলাকা নিরাপদ ঘোষণা করেন বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
মহড়া শেষে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক বলেন, ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।’