রংপুরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালককে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে এক পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
এই হত্যার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক বিক্ষোভও করেছেন। তারা বলছেন, রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগম নখ উপড়ে হত্যা করেছেন ইজিবাইকের চালক নাজমুল ইসলামকে।
নাজমুল শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তাকে হত্যা করা হয় শহরের পার্কের মোড় এলাকায়। নাজমুল ও হাসান আলী দুজনেই পার্কের মোড় এলাকার কোর্টপাড়ার বাসিন্দা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চুরির অপবাদে ইজিবাইক চালক নাজমুলকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেন হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী।
এর প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা বুধবার রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ আটক করে দুই জনকে।
ইজিবাইকের চালককে হত্যার ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রংপুরে বিক্ষোভ
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, কনস্টেবল হাসান আলীর একটি ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে চালাতেন নাজমুল। দুই দিন আগে ইজিবাইকটি চুরি হলে নাজমুলকে মঙ্গলবার রাতে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যান হাসান।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আলতাফ হোসেন জানান, বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ কনস্টেবল হাসানের ঘর থেকে নাজমুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানান, তারা নাজমুলের দু্ই হাতের নখ থ্যাঁতলানো এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন।
ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়রা হাসান ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবি করে পার্কের মোড় এলাকায় রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কে অবস্থান নেন। তারা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরও করেন।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গেলে সেখানকার মানুষজন পুলিশ সদস্য হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। পরে তাদের আটক করি।’
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতনে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও একটি প্লাস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের জন্য নাজমুলের মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানোর পর অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে
রংপুর তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, নিহত নাজমুলের বাবার বাড়ি লালমনিরহাটের মোস্তফি রথিপুর এলাকায়। তিনি পার্কমোড় কোর্ট পাড়া এলাকায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
নাজমুলকে হত্যার খবর শোনার পর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওসি আখতারুজ্জামান জানান, তারা হত্যা মামলা করতে যাচ্ছেন। নাজমুলের স্ত্রীকে বাদী করা হবে। আর পুলিশ কনস্টেবল হাসান ও তার স্ত্রীকে আসামি করে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।