বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার আর নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশ্বাসের পাঁচ দিন পরেই রক্ত ঝরল ময়মনসিংহ সীমান্তে।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গোবড়াকুড়া সীমান্তে মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি।
বিজিবির গোবরাকুড়া ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার উমর ফারুক জানান, নিহতের নাম খাইরুল ইসলাম। বাড়ি গোবরাকুড়া গ্রামে। তিনি ভারত থেকে গরু আনতে যাচ্ছিলেন।
বিজিবি কমান্ডার জানান, রাত নয়টার দিকে খাইরুল সীমান্তের ১১২৪ নম্বর মেইন পিলারের কাছে গেলে ভারতের গাছুয়াপাড়ায় বিএসএফের টহল দল গুলি ছোড়ে।স্থানীয়রা তখন খাইরুলকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই হত্যার ঘটনা ঘটল সেদিন, যেদিন সীমান্ত হত্যাসহ ১০ বিষয়ে ভারতে বৈঠক চলছে বিজিবি-বিএসএফের। ওই বৈঠকে দুই দেশের সরকারের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় ভারতের গোহাটিতে চার দিনের এই সম্মেলন শুরু হয়।
এর পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সামিটে সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা বলেন ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদি।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি। দেশবাসীর মতো আমরাও হতাশ।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা দুই দেশের জন্যই অস্বস্তিকর বিষয়। অনেক ভালো সম্পর্কের পরও এ ধরনের দু-একটি ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।’
মোদি কী বলেছেন- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ সরাসরি সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার বিষয়ে আবারও ঘোষণা দিয়েছেন।’
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে এই হত্যা নিয়ে গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গত এক দশকে হত্যা কমে আসলেও শান্তি বজায় থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও এটি নিয়ে সোচ্চার মানবাধিকার সংঠনগুলো। সে দেশের সুপ্রিম কোর্টেও এ নিয়ে আবেদন করেছেন তারা।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জাতীয় সংসদে জানান, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগের ১০ বছরে হত্যা হয়েছে এক হাজারের বেশি।