রাজধানীর দুই আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলী ও মহাখালীকে নগরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার দুই মেয়র।
এই স্থানান্তরের পর নগরের ভেতরে চলা বাসগুলো থাকবে এই টার্মিনালগুলোতে। এতে নগর পরিবহনের বাসগুলোকে আর সড়কে দাঁড়াতে হবে না।
এই দুটির পাশাপাশি নগর পরিবহনে চলা বাসগুলোর জন্য নির্মাণ হবে মোট ১০টি টার্মিনাল।
আন্তঃজেলা বাসের জন্য গাবতলী টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া হবে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায়। আর মহাখালী টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া হবে আশুলিয়ার কাছে বিরুলিয়া এলাকায়।
রাজধানীতে গণপরিবহনে অরাজকতা বন্ধে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সায়েদাবাদ টার্মিনালও সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার বিরুলিয়ার বাটুলিয়া পাড়া ও হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দুটি স্থান পরিদর্শনও করেন দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নুর তাপস।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র তাপস জানান, ঢাকার বাস রুট ও ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তাতে টার্মিনাল ব্যবস্থাপনাতেও আসবে বদল।
রাজধানীর প্রবেশ পথে নির্মিত হবে মোট চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল।
আর নগর পরিবহনগুলো টার্মিনাল পেলে গাড়ি রাখার যে সমস্যা, তার সমাধান হবে বলে আশা করছেন দুই মেয়র। এতে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তাদের ধারণা।
বাস রুট রেশনালাইজেশনের জন্য নতুন টার্মিনাল নির্মাণের স্থান পরিদর্শনে ঢাকা সিটির দুই মেয়র। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকার উত্তর অংশের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের বাস গাবতলীতে ও আন্তঃজেলার বাস হেমায়েতপুরে থাকবে। এর জন্য আমরা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও দুই মেয়র মিলে জায়গাগুলো পরিদর্শন করছি। বাকি দুটি টার্মিনাল করতে কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ীতেও আমরা যাব।’
ঢাকার দক্ষিণ অংশের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আন্তঃজেলার যে বাসগুলো আছে সেগুলো শহরের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করে এবং শহরের টার্মিনালগুলো ব্যবহার করে। কিন্তু সিটি বাসগুলো সেই টার্মিনালগুলো ব্যবহার করতে পারে না। তার কারণে যত্রতত্র বাসগুলো রাস্তার উপরে থাকায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরজমান আছে। সেই বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে আমার বিশেষজ্ঞদের অভিমতের ভিত্তিতে এ পরিদর্শন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বহির্বিশ্বে দেখেছি আন্তঃজেলা বাসগুলো শহরের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না। শহরের বাইরেই যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে শহরকেন্দ্রিক যে পরিবহনগুলো আছে, সেগুলো দিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে। সেই ব্যবস্থাটাই আমরা নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
রাজধানীর বাস পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। মোট ২৯১টি রুটে প্রায় ৩০ হাজার বাস চলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রুট ৪২টিতে নামিয়ে আনা হবে। নয়টি ক্লাস্টারে ২২টি কোম্পানি চালাবে এসব বাস। বাসের সংখ্যা কমিয়ে করা হবে নয় হাজার ২৭টি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিল থেকে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাসের পাইলটিং শুরু হবে। কেরানিগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুট দিয়ে শুরু হবে এই উদ্যোগ। এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে ‘বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি পাইলটিং’।
- আরও পড়ুন: রাজধানীর ৪২ রুটে চলবে ২২ কোম্পানির বাস
২০১৬ সালের শুরুতে ছয়টি কোম্পানির অধীনে ছয় রঙের বাস নামানোর উদ্যোগ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুর পর থেমে যায় প্রকল্প।
২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশন করার জন্য ১০ সদস্যের কমিটি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের সে সময়ের মেয়র সাঈদ খোকন।