তুরস্কের তৈরি অস্ত্র মানসম্পন্ন এবং দামে কম জানিয়ে, দেশটির সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুত সাবুসোলু বলেছেন, বাংলাদেশ এই অস্ত্র কিনে লাভবান হতে পারে। সামরিক খাতে বাংলাদেশকে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা চায় জানিয়ে তুর্কি মন্ত্রী বলেন, ‘তুরস্কের যুদ্ধাস্ত্র বিশ্বের অন্যতম সেরা, দাম কম, কোনো আগাম শর্ত নেই। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে লাভবান হবে।’
- আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্কের বরফ গলছে
সামরিক ও অসামরিক খাতে প্রযুক্তি বিনিময়ের সম্ভাবনা কতটুকু?
এমন প্রশ্নে তুর্কি মন্ত্রী বলেন, ‘তুরস্ক যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে রাজি। আমরা সব কিছু তৈরি করি না। কিন্তু আমরা আমাদের চাহিদার ৭০ শতাংশের বেশি উৎপাদন করি। অতীতে পরাশক্তির কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে আমরা নানা সমস্যায় পড়েছি। এ কারণে পরে আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে শুরু করি এবং এই খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করি।
‘এ ক্ষেত্রে মিত্র এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি বিনিময়ও করেছি। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তুরস্ক রাজি আছে।’
অবকাঠামো খাতেও বাংলাদেশকে পাশে চায় তুরস্ক। এ নিয়ে তুর্কি মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। এখন এখন বড় বড় প্রকল্প করছে। আমরাও বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছি।
‘আমরা তুর্কি কোম্পানিগুলোতে উৎসাহ দিচ্ছি। তুরস্কের নির্মাণ শিল্প বিশ্ব মানের। এই ক্ষেত্রে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে আছি আমরা। তবে আমাদের পণ্য চীনা পণ্যের চেয়ে সেরা ও বিশ্বমানের। দাম ও সহনীয় এবং আকর্ষণীয়।
দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যর ভবিষ্যত নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-তুরস্কের মধ্যে এখন এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। আমরা আগামীতে একে দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই। যা কিছুদিনের মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়াব।’
সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়াতে চান তুরস্কের মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষায় তুরস্ক বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেবে। ঢাকায় আমরা একটি তুর্কি হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাই।’
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও মেবলুৎ সাবুসোলু।
এরদোয়ান কবে আসছেন ঢাকায়, এমন প্রশ্নে সাবুসুলো জানান, ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাদের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসবেন।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এরদোয়ান সরকার খুবই আন্তরিক বলে জানান সাবুসুলো। বলেন, এ বিষয়ে তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে আছে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ যে ‘আত্মত্যাগ’ করেছে তুরস্ক তা গভীরভাবে উপলব্ধি করে বলেও মন্তব্য করেন তুর্কি মন্ত্রী।
২০১২ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হলেও গত দুই বছরে দুই দেশ অনেক কাছাকাছি এসেছে।
চলতি বছর দুই দফা বাংলাদেশকে করোনার চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দিয়েছে আঙ্কারা। ঢাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে যখন ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল ও সংগঠন বিরোধিতায় নামে তখন, রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান সরকার জানায়, তাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। আর তুরস্কের টাকায় ঢাকায় বসবে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন ঘুরে দেখছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশে ফায়ার স্টেশন এবং অতি দরিদ্র মানুষকে ঘর করে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তুর্কি সরকার।
- আরও পড়ুন: গৃহহীনদের ঘর করে দিতে চান এরদোয়ান
আর দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান বা আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঢাকা। তুরস্ক জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এরদোয়ান ঢাকায় আসবেন।
- আরও পড়ুন: মুজিববর্ষে আসছেন এরদোয়ান
দুই দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা যখন বাড়ছে, তখন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন এরদোয়ানের মন্ত্রী সাবুসুলো। পরদিন সকালে মোমেনের সঙ্গে হয় বৈঠক।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
এক প্রশ্নের উত্তরে তুর্কি মন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার যেমন ইউএনএইচসিআর, আইওএম এর মতো প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা যেন ভালো থাকে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। তবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াটাই মূল সমাধান।
এর আগে দুই মন্ত্রী বৈঠক করেন দেড় ঘণ্টা। এরপর যৌথ ব্রিফিংয়ে আসেন।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
প্রথমে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। তিনি দুই দেশের জাতির জনকের ভাস্কর্য নির্মাণ ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাশে থাকায় তুরস্কের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও গণভবনেও বৈঠক করেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান তিনি।