যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের জন্য দেশের তিন বিমানবন্দরে আলাদা হেলথ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বুধবার সকালে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লন্ডন থেকে আসা যাত্রীদের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। পাশাপাশি আমরা এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। যুক্তরাজ্য থেকে যেসব যাত্রী আসবেন, তাদের আলাদাভাবে শারীরিক, আমরা যেটাকে বলি স্ক্রিনিং, আলাদাভাবে করব যাতে করে যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে, এটা প্রশমন করা যায়।
‘বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। চিকিৎসক, ইমিগ্রেশন সকলেই এ বিষয়টা অবগত। আমরা যদি মনে করি মেডিক্যাল পরীক্ষা করে কোনো সন্দেহ করি, প্রয়োজনে এখানেই তাদের আবার পিসিআর টেস্ট করা হবে। এই টেস্ট ছাড়া আমরা কাউকেই এখানে অ্যালাউ করছি না।’
যুক্তরাজ্যের ট্রানজিট যাত্রীদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এয়ারলাইন্সগুলোকে বলা হয়েছে, তারা যেন লন্ডন হয়ে আসে যাত্রীদের একটি তালিকা আমাদের আগেই দিয়ে রাখে। এটা দেখে তাদের জন্য আলাদা হেলথ চেকআপ নিশ্চিত করা হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
রাজধানীর আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে এক অনুষ্ঠানের পর তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি, প্রয়োজন হলে আমরাও শেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
‘আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, যুক্তরাজ্যের ফ্লাইটে করে যারা আসবে তাদের আলাদা করা হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের সাত দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।’
করোনার নতুন ধরনের প্রাদুর্ভাব রুখতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এসব করা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
‘যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত যথাসময়ে’
এদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব আলী।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে যে করোনাভাইরাসের যে নতুন মিউটেশন, এটার ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ন, বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদের দেশ থেকেও আমরা গভীর পর্যবেক্ষণ করছি।’
‘আমাদের মন্ত্রণালয় ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও আছে। সবাই কিন্তু এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করছে। বন্ধ করা এমন কোনো ব্যাপার না। কিন্তু জিনিসটা গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে আছে। আমরা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও জানিয়েছেন, লন্ডনের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
বিদ্যমান করোনা মহামারি ঠেকাতে বিশ্ব যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্য থেকে নতুন ধরনের করোনা শনাক্তের খবর এসেছে। বলা হচ্ছে, করোনার যেকোনো ধরন থেকে নতুনটি ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক।
এই খবর পাওয়ার পরই ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও। পুঁজিবাজার ও জ্বালানি তেলের দামের সূচক নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে।