বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শফী হত্যা মামলায় ‘দালাল’, আসামিদের পাশে নিয়ে বাবুনগরী

  •    
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৪:২৩

আহমেদ শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করার ছয় দিন পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরী দাবি করেন, হত্যা মামলা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। এর পেছনে রয়েছে দালাল। তবে কাদের দালাল, সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি।

ধর্মভিত্তিক দল হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে যারা মামলা করেছেন, তাদের দালাল বলেছেন সংঠনের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী।

তবে মামলার বাদী কাদের দালাল, কী তাদের উদ্দেশ্য এ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি হেফাজত আমির। বারবার প্রশ্ন করলেও তিনি নীরব থাকেন।

বাবুনগরীর দাবি, তাদের সংগঠনের শতবর্ষী ধর্মীয় নেতার মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিক। তাকে হত্যা করা হয়নি।

শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করার ছয় দিন পর চট্টগ্রামের বুধবার হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরীর দাবি করেন, যে হত্যা মামলা হয়েছে, সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, প্রচার সম্পাদক নোমান ফয়জী, যুগ্ম মহাসচিব কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনীর, মাওলানা মীর ইদরিস নদভী, সহকারী মহাসচিব সহকারী যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ সংগঠনের বর্তমান কমিটির নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এদের অনেকেই আল্লামা শফীকে হত্যার মামলার আসামি।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর আল্লামা শফীর মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়, যাতে তিনি মাদ্রাসা প্রধানের পদ ছাড়তে বাধ্য জন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন

বাবুনগরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে মামলার বাদী আল্লামা শফীর শ্যালক মাঈনউদ্দিনকে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে শফীর ছেলে আনাস মাদানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা দালাল, সেটা তাদেরকে প্রমাণ করতে বলেন। আমার বাবার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, সেটার বিচার চাই।’

বাবুনগরীর দাবি, আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর এর অংশ হিসেবে করা হয়েছে ‘মিথ্যা’ মামলা।

তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ এনে যে মামলা করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ এ মামলা।’

অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করা হেফাজতের কাছ থেকে কী রাজনৈতিক ফায়দা লুটা সম্ভব, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি বাবুনগরী।

যারা মামলা করেছেন, তারা হেফাজতের আগের কমিটিরই নেতা। নিজেদের সাবেক সহকর্মীদেরকে ‘দালাল’ উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, ‘সবাই তাদের জানে, নাম বলার দরকার নাই। সরকার বা কোন মন্ত্রী-এমপি থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করার জন্য এ মামলা করেছে।

‘হুজুর (আল্লামা শফি) অসুস্থ থাকার সময়ও উনাকে পুঁজি করে অনেক ফায়দা লুটেছে। ছাত্র-শিক্ষকদের হয়রানি করেছে। বুড়া বলে হুজুরের সাক্ষরিত একজন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন চিঠি ছিড়ে ফেলেছিল আনাস মাদানী। হুজুর আমাদের শ্রদ্ধার, উনাকে বুড়া বলা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।’

১০৪ বছর বয়সী শাহ আহমদ শফী নেতা গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার দুই দিন আগে তার হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়।

মাদ্রাসা প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়া, তার ছেলে আনাস মাদানীকে চাকরিচ্যুত করাসহ হেফাজতের একাংশের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। তখন শফীর খাস কামরায় হামলা হয়, ব্যাপক ভাঙচুর চলে।

মাদ্রাসায় যারা হাঙ্গামা করেন তারা আল্লামা শফির কার্যালয়-কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেন, অভিযোগ আছে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়

শফীর খাদেম এবং তার এক নাতির লেখা এক পুস্তিকায় অভিযোগ করা হয়েছে, সেদিন শফীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে, তার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে, হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেয়া হয়নি, পরে অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আর ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি হয়ে গেছে। পরদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই ঘটনায় হেফাজতে স্পষ্টত বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং গত ১৭ ডিসেম্বর ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয় চট্টগ্রামের একটি আদালতে, যার আসামিদের সিংহভাগ হেফাজতের বর্তমান কমিটির নেতা।

চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম শিবলু কুমার দের আদালতে মামলাটি করেন শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। আসামিদের মধ্যে আছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস নদভী, সহকারী যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আল্লামা শফীকে গৃহবন্দি করে নির্যাতনের মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে থেকে খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ আবু হানিফ নিউজবাংলাকে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে।

গত ১৫ নভেম্বর বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তার আগের দিন চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলন স্থগিত করে শফীর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের দাবি জানায় হেফাজতের একাংশ।

মাদ্রাসায় হাঙ্গামায় আল্লামা শফী অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ আছে। এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেয়া হলেও অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে

শফীকে চিকিৎসায় বাঁধা দেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে বাবুনগরী বলেন, ‘আল্লামা শফি অসুস্থ হওয়ার পর তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন সিনিয়র শুরা সদস্য সবাই ছিলেন উপস্থিত। তাদের সামনে তাকে চিকিৎসা জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আমরা সবাই হুজুর (আল্লামা শফি) আশেক, প্রেমিক। ওনার উপর নির্যাতন করার প্রশ্নই আসে না। যে অভিযোগ করছে তা বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

আগের কমিটি থেকে শফীপন্থি হিসেবে পরিচিতদের বাদ দেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে বাবুনগরী বলেন, ‘কমিটি করার সময় কিছু যোগ্য মানুষ বাদ পড়ে গেছে। নতুন করে তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। কোনো এমপি বা মন্ত্রীর সাথে মিটিং করে কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি।’

নভেম্বরের সম্মেলনে নতুন মহাসচিব হওয়া নূর হোসাইন কাসেমী মারা যাওয়ায় তার জায়গায় কে আসবেন, সেটা এখনও ঠিক হয়নি বলেও জানান বাবুনগরী। তিনি বলেন, ‘এখনও এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়নি। শুরা কমিটিসহ শীর্ষ নেতারা বসে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ হেফাজতের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আবছর আজহারী।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘হাটহাজারী মাদরাসা তৎকালীন শিক্ষা পরিচালনক মাওলানা নুর আহমদকে পাশ কাটিয়ে শাহ আহমদ শফী ছেলে আনাস মাদানী মাদরাসা পরিচালনার বিভিন্ন অনৈতিকভাবে কর্তৃত্ব নিয়ে নেন।

‘আনাস মাদানী ছাত্রদের জোরপূর্বক ছাত্রবাস ত্যাগে বাধ্য করেন। অনেক ছাত্রকে নির্যাতন করেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর অত্যাচার শিকার ছাত্ররা মাদরাসায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

‘এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন পরিচালক আহমদ শফী মাদ্রাসার শুরা কমিটির বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এরপর মাদ্রাসায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে।’

এ বিভাগের আরো খবর