বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মধু বাবুলের সাফল্যের গল্প

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:২৮

২০০৩ সালে নড়াইলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মৌচাষের ওপর দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাড়ির গাছ বিক্রি করে ও অন্যের কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে সাতক্ষীরার মৌচাষি আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায় অস্ট্রেলিয়ান ‘এপিস মেলিফেরা’ জাতের মৌমাছিসহ ৫টি মৌ-বাক্স কেনেন।

মধু দিয়ে এলাকায় পরিচয় বাবুল শেখের; এলাকাবাসী ডাকে ‘মধু বাবুল’ নামে। নিজে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছেন এক হাজারের বেশি মানুষকে। বর্তমানে তার খামারে কাজ করছেন ৪০ জন কর্মী।

৪৫ বছর বয়সী বাবুল শেখ নড়াইল সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের একজন সফল মৌ-খামারি। মৌ চাষ করে বছরে গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।

বাবুল জানান, তার এ সাফল্য একদিনে আসেনি। কৃষিজীবী বাবার সামান্য জমিতে চাষাবাদের আয় দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলত। স্থানীয় নাকশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা।

২০০২ সালে সাতক্ষীরায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় রোস্তম আলীর মৌমাছির খামারে গিয়ে সেখান থেকে মৌ চাষ সর্ম্পকে জানেন তিনি।

২০০৩ সালে নড়াইলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মৌ চাষের ওপর দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাড়ির গাছ বিক্রি করে ও অন্যের কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে সাতক্ষীরার মৌচাষি আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায় অস্ট্রেলিয়ান ‘এপিস মেলিফেরা’ জাতের মৌমাছিসহ ৫টি মৌ বাক্স কেনেন।

নিজের প্রশিক্ষণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ও বাড়িতে নার্সিং করে এক বছরের মধ্যে ২৫টি মৌ বাক্স তৈরি করেন তিনি।

২০০৪ সালে বাবুল ২৫টি মৌ বাক্সসহ নড়াইলের বিভিন্ন স্থানে মধু সংগ্রহ করতে থাকেন। ওই বছর তার ১০ থেকে ১২ মণ মধু সংগ্রহ হয়। লাভ না হলেও তিনি দমে যাননি। পরের বছর মৌ পালনের নার্সারি করেন।

বর্তমানে বাবুলের মৌ বাক্সের সংখ্যা ১০০টি। মধু উৎপাদনের মৌসুমে তিনি যশোর, রাজশাহী, খুলনার সুন্দরবন, ঢাকা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যান। ওই সব বাক্স থেকে প্রতি মৌসুমে বাবুল ৫০ থেকে ৬০ মণ মধু সংগ্রহ করেন।

বাড়িতেই তিনি গড়ে তুলেছেন মৌ চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এক হাজারের বেশি যুবক তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

বাবুল শেখের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মৌচাষি খয়ের মোল্লা জানান, দশ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র চার থেকে পাঁচ জন মৌচাষ করতেন। এখন এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাধিক।

খয়ের মোল্লা আরও জানান, আকার ভেদে প্রতিটি বাক্সে পাঁচ থেকে ১৫টি ফ্রেম থাকে এবং প্রতিটি ফ্রেমে প্রায় তিন হাজার করে মৌমাছি থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের পর এসব ফ্রেমের উভয় পাশে জমা করে।

সাধারণত ছয় থেকে সাত দিন পর পর মধু সংগ্রহ করা হয়। মৌমাছিরা সরিষা, তিল, ধান ও ডালের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। এ ছাড়া লিচুসহ বিভিন্ন ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করে। বছরে আট মাস মধু সংগ্রহ করা হয়।

বছরের অন্য সময়ে মৌমাছিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে খাবার হিসেবে চিনির পানি অথবা মধু দিতে হয়।

খয়ের মোল্লা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি মধু পাইকারিভাবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নড়াইল কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ চিন্ময় রায় বলেন, ‘বাবুল শেখ যা করেছেন তা সকলের জন্য একটি উদাহরণ। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই এখন মৌচাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এ কাজে।’

এ বিভাগের আরো খবর