রাজধানীর বেইলি রোডের মনোয়ারা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ তুলে ভাঙচুর করেছেন স্বজনরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে। এ ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যে ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি; তার ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
হাজি মো. সিরাজুল ইসলাম (৬৯) নামের ওই রোগী বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সাবেক সভাপতি। তার বাসা সেগুনবাগিচায়।
সিরাজুল ইসলামের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর বাসার সিঁড়িতে পড়ে বাম পা ভেঙে যায় তার। সেদিন রাতেই তাকে সার্জন এ কে এম ইসহাকের আধীনে মনোয়ারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাম পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় তা জোড়া লাগাতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার ইসহাক।
রোগীর মৃত্যুর পর পালিয়ে যান ডাক্তারসহ হাসপাতালের লোকজন। ছবি: নিউজবাংলাসে অনুযায়ী ৬টায় অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেয়া হয় সিরাজুল ইসলামকে। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওটি থেকে জানানো হয়, রোগীর পালস রেগুলার নয়, তাকে আইসিইউতে রাখতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে সিরাজুল ইসলামকে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানকার ডাক্তার রোগীর স্বজনদের বলেন, ‘উনি ঠিক হয়ে যাবেন, সব স্বাভাবিক আছে, দুই দিন পর আপনারা দেখা করতে পারবেন।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন কথায় সন্দেহ হয় স্বজনদের। তারা জোর করে আইসিইউতে ঢুকে বুঝতে পারেন রোগী মারা গেছেন। এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান ডাক্তার ও কর্মকর্তারা। এরপর ক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালান।
সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শারমিন সুলতানা মিলি নিউজবাংলাকে জানান, পা ভাঙা ছাড়া তার বাবার অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। ওটিতে ঢোকার আগেও ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক ছিল।
মিলি বলেন, ‘নিশ্চয়ই তারা অ্যানেসথেশিয়ার ডোজে গরমিল করেছে। সেজন্য আমার বাবার আর জ্ঞান ফেরেনি।
এ অভিযোগের ভিত্তি জানতে চাইলে মিলি বলেন, ‘আমার বাবার পায়ের অপারেশনের কথা ছিল। তার পায়ের হাড় স্ক্রু দিয়ে জোড়া দেয়া হবে- ডাক্তার এমনটাই বলেছিলেন। কিন্তু বাবার পায়ের প্লাস্টার যেমন ছিল, তেমনি আছে। কোনো অপারেশন করা হয়নি। তার মানে, অজ্ঞান করার সময়ই কোথাও ভুল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা ওটি চার্জ নিয়েছে। কিন্তু রশিদ দেয়নি।’
মনোয়ারা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে ভাঙচুর করেন স্বজনরা। ছবি: নিউজবাংলাহাসপাতালের পাঁচ বেডের আইসিইউতে ঢুকে দেখা যায়, লাইফ সাপোর্ট মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম জড়িয়েই বিছানায় পড়ে আছে সিরাজুল ইসলামের মরদেহ। হাতে ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র, পায়ে ইসিজি মেশিনের ক্লিপ- সবই চালু। কিন্তু কোনো ডাক্তার-নার্স নেই। আইসিইউতে আর কোনো রোগীও নেই।
সন্ধ্যা ৬টায় মিলির ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিরাজুল ইসলাম খুবই প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের অংশ হিসেবে সিরাজুল ইসলামের চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রমনা থানার কর্মকর্তারা। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।
রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। পরিবার চাইলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা হবে।