বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আখক্ষেতে আগুন: গভীর ষড়যন্ত্র বলছে পুলিশ

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ২৩:১৫

‘উৎপাদিত সকল ফসলের মালিক রাষ্ট্র। কিন্তু আপনি তা নিজের দাবি করে আগুনে পুড়ে ক্ষতি সাধন করতে পারেন না। এটা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। কেউ যদি আদালতকে বলে আমি আমার সন্তানকে মেরেছি; আপনি বিচার করার কে? এটাও এমন ঘটনা।’

গাইবান্ধায় আখক্ষেতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলছে পুলিশ। এ ঘটনায় কারও উসকানি আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

সম্প্রতি রংপুর সুগার মিলের সামনে আন্দোলনরত শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তা ও চাষিদের সংবাদ সম্মেলন চলাকালে নিজেদের ক্ষেতে আগুন দেন মিলটির কর্মচারী ও আখচাষি জোবায়দুর রহমান। এ ঘটনায় ধারণ করার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। চিনিকল বন্ধের ‘প্রতিবাদে’ আখ ক্ষেত পুড়িয়ে প্রতিবাদ - এমন শিরোনামে প্রতিবেদন আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

অথচ চাষি জোবায়দুর বলছেন, মূলত চাষিদের আন্দোলন বেগবান করতে এবং মিডিয়ায় ঘটনাটি তুলে ধরতেই সেদিন জমিতে আগুন ধরিয়ে দেন তারা দুই ভাই।

লোকসান কমাতে গত ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। এই ছয় চিনিকলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আখ মাড়াই বন্ধ করা হয়েছে। এসব চিনিকলের আখ আশপাশের কলের জন্য সংগ্রহ করবে সরকার। শ্রমিক-কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে ওইসব কলে কর্মসংস্থানেরও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে চিনিকলগুলোর শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আখ চাষিরা। পরে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে মিলের পশ্চিম দিকে আখের জমিতে আগুন দেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান ও তার ভাই মিল কর্মচারী জোবায়দুর রহমান।

পরদিন গত ২০ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চিনিকল নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসএফআইসি।

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনেই ২০-২৪ ডিসেম্বর লাগাতার বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। মিল এলাকায় ২৫ ডিসেম্বর অর্ধদিবস হরতালের ডাকও দেন তারা, যেদিন আশপাশের কলগুলোয় আখ মাড়াই শুরু হওয়ার কথা।

আখ ক্ষেতে আগুন দেয়ার ওই ঘটনার পরদিন রোববার শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন রংপুর চিনিকলের আন্দোলনকারীরা। সোম ও মঙ্গলবার চিনিকলের সামনে আন্দোলনরত কাউকে দেখা যায়নি। সেদিন আগুনে পুড়ে যায় জিল্লুর রহমান ও তার ভাই মিল কর্মচারী জোবায়দুর রহমানের ছয় বিঘার মধ্যে তিন বিঘা জমির আখ।

তারা দুই ভাই সরকারের কাছ থেকে ‘ক্ষতিপূরণ’ আদায়ে নিজেদের ক্ষেত পুড়িয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বললেও পুলিশ বলছে- এখানে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে। কেউ তাদের উসকানি দিতে পারে।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উৎপাদিত সকল ফসলের মালিক রাষ্ট্র। কিন্তু আপনি তা নিজের দাবি করে আগুনে পুড়ে ক্ষতি সাধন করতে পারেন না। এটা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড।’

বিষয়টিকে তিনি সন্তানকে খুনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘কেউ যদি আদালতকে বলে আমি আমার সন্তানকে মেরেছি; আপনি বিচার করার কে? এটাও এমন ঘটনা।’

ওসি মেহেদী জানান, তাদেরকে আখের জমিতে আগুন দিতে কারা বা কীভাবে উসকানি দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিজ হাতে জমিতে আগুন দেয়ার পর ক্ষেতের মালিক চিনিকলের কম্পিউটার অপারেটর জোবায়দুর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা ঋণ নেই। সেই টাকায় ক্ষেতে সার-কীটনাশক ছিটাই। যেহেতু আখ মিলে নেয়া হবে না, তাই রাগ-ক্ষোভ থেকে দুই ভাই জমিতে আগুন দিয়েছি। কাজটা দেশের জন্য খারাপ হলেও নিজেদের দুঃখ জানান দিতে পেরে সঠিক কাজই করেছি বলে মনে করছি।’

জোবায়দুর জানান, মিল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কোনো বকেয়া নেই। তবে তার বেতনের প্রায় ৫০ হাজার টাকা পান তিনি।

আখক্ষেতে আগুন দেয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রধান বলেন, ‘আমিও কৃষকের সন্তান। আমার জমিতেও আখ আছে। এ সমস্যায় আমি নিজেও রয়েছি। তাই বলে উসকানিতে ক্ষেত জ্বালিয়ে দেব?’

গত শনিবারের ওই ঘটনা নিয়ে রোববার বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা হয়। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও চিনিকলের শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আখ চাষি ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সরকার তো অন্য মিলের জন্য চাষিদের আখ কিনবে। এরপরও কেন আগুন দিলেন- এমন প্রশ্নে জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘রংপুর চিনিকলের চেয়ে ছোট জয়পুরহাট চিনিকলে আখ দিতে গেলে অনেক সময় লাগবে। এতে ক্ষেতের আখ জমিতেই শুকিয়ে যাবে। আখ তুলতে না পারলে ধান চাষও করা যাবে না।’

এসময় তিনি তার অন্য আখের জমিও পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কারও উসকানিতে তারা নিজেদের ক্ষেতে আগুন দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জোবায়দুর বলেন, ‘আমি চিনিকলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে আন্দোলনকে বেগবান করতেই আগুন দেই।’

আগুন লাগার মিনিট পাঁচেক পর সাংবাদিকরা জমিতে কীভাবে পৌঁছালেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের স্থল থেকে আখের জমির দূরত্ব আধা কিলোমিটারের কম। আগুন দেয়ার পর কেউ তাদের ফোন করে।’

এ বিষয়ে চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, ‘মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রমিক, কর্মচারী ও আখ চাষিদের টানা আন্দোলন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। কিন্তু শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের সময়ে হঠাৎ মোবাইল ফোনে আখের জমিতে আগুন দেয়ার খবর আসে।’

আখের জমিতে আগুন দেয়ার ঘটনার জন্য জিল্লুর রহমান ও তার ভাই জোবায়দুরের ‘হটকারী ও জেদী মনোভাবকে’ দায়ি করেন তিনি।

চিনিকল নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএসএফআইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে আখ মাড়াই স্থগিত থাকা ছয়টি চিনিকলের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহকৃত সমুদয় আখ ক্রয় করা হবে। এ সব চিনিকলের ক্যাচমেন্ট এলাকার আখ ক্রয় করা হবে না- মর্মে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।

বিএসএফআইসি জানিয়েছে, সংস্থাটির আওতাধীন চিনিকলগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলসমূহকে লাভজনক করার লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এ সব চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম চলতি মৌসুমের জন্য স্থগিত করা হলেও বিগত বছরগুলোর মতো এসব মিলের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহকৃত আখ কেনা হবে। পরবর্তীতে তা পার্শ্ববর্তী চালু মিলে মাড়াইয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চাষিদের আখের মূল্য পরিশোধে সরকার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে।

বিএসএফআইসি বলছে, চলতি মৌসুমে মিলের মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে কোনো আখ চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আখ মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলোতে কর্মরত কোনো শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হবে না; যথাযথ বেতন/মজুরি দেয়া হবে।

বিএসএফআইসি জানিয়েছে, আখ মাড়াই চালু থাকা চিনিকলগুলোতে স্থগিত মিল থেকে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে বদলি বা সংযুক্তির মাধ্যমে সমন্বয় বা পদায়ন করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর