সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
কলারোয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক শফিকুর রহমান মঙ্গলবার সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এ নিয়ে এ মামলায় ২০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শেষ হলো। আগামী ২৯ ডিসেম্বর আসামিদের ৩৪২ ধারায় মতামত গ্রহণের পাশাপাশি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ঠিক করেছেন বিচারক মোঃ হুমায়ুন কবীর।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরা জজ আদালেতর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
আসামিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন হাইকোর্টের আইনজীবী শাহানারা আক্তার বকুল, আব্দুল মজিদ (২), মিজানুর রহমান পিন্টু, তোজাম্মেল হোসেন তোজাম প্রমুখ।
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়া উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে মাগুরায় যাচ্ছিলেন। পথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনের সড়েক বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা তার গাড়িবহরে হামলা চালান। জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে এ হামলা চালােনার অভিযোগ ওঠে।
হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমানসহ এক ডজন দলীয় নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামি করে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০১৫ সালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে মামলাটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা হয়।
আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগস্ট মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন। তিন বছর পর আসামি পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট পেনালকোর্ডের মামলা (টিআর-১৫১/১৫) ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও অস্ত্র আইনের মামলা দুটির ওপর স্থগিতাদেশ ও আপিল খারিজ করে দেয়।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এর পর আর কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করা হবে না মর্মে আদালতকে জানানো হয়। এ পর্যায়ে ২৯ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্কের দিন ঠিক করা হয়। সেক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেয়া তিন মাসের মধ্যে রায় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরও জানান, মামলার সাক্ষীরা যেভাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাতে সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ আসামিদের সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা হতে পারে। মঙ্গলবার আদালতের কাঠগোড়ায় ৩৭ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মজিদ বলেন, মামলার যে সব দুর্বল জায়গা রয়েছে তাতে সব আসামি বেকসুর খালাস হবে বলে তিনি আশাবাদী।