বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্কের বরফ গলছে

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৭:৩০

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর। বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী এরদোয়ান। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে দুই দেশের জেইসি কমিটির বৈঠক বসছে ফেব্রুয়ারিতে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে চলা শীতল সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে বাংলাদেশের পাশে শক্ত অবস্থান নেয় তুরস্ক।

রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে ছুটে আসেন তুরস্কের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। আসে ত্রাণ ও চিকিৎসাসামগ্রী। উখিয়ায় তৈরি হয় রোহিঙ্গাদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল।

দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হয় গত সেপ্টেম্বরে। সে দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই সফরে তিনি বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে।

সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহের কথা জানান এরদোয়ান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য এক বিলিয়ন ডলার থেকে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখান তিনি।

এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা সফরে আসছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু। ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করতে আসছেন তিনি। তবে আলোচনা হবে এরদোয়ানের সফর প্রস্তাব নিয়েও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ওই প্রস্তাবের বাইরেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক ও বাণিজ্যিক বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েই নতুন সম্পর্কের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ও তুরস্ক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ইউরোপ ও সিআইসি বিভাগের মহাপরিচালক শিকদার বদিরুজ্জামান এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দু দেশের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দূতাবাস ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন সে দেশের রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক হয়েছে। তাদের প্রেসিডেন্ট আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় দিয়েছেন। তিনি নিজে বাংলাদেশ সফরে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মহামারি কমলেই তিনি ঢাকায় আসবেন।’

রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসেন তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান। ফাইল ছবি

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে প্রতি বছর দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে জয়েন্ট ইকনোমিক কোঅপারেশন (জেইসি) কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ফেব্রুয়ারির মধ্যে পররাষ্ট্র সচিবদের প্রথম বৈঠক ও জেইসি বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকা অথবা ঢাকার অদূরে একটি অত্যাধুনিক টার্কি-বাংলা মৈত্রী হাসপাতাল করার ঘোষণা দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এছাড়া বাংলাদেশে মহাসড়ক, হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ঘোষণা দেন তিনি।

বুধবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এসব নিয়েই আলোচনা হবে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়টি। তুরস্ক শুরু থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রেখেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সবসময়ই তুরস্ককে পাশে চায়।

বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন ধারা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নানাভাবে কাজ করে। তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, যদিও একটা সময় ভূ-রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দেয়। তবে গত দুই দশকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের আর্থিক ও সামরিকভাবে বদলে যাওয়ার কারণে সম্পর্ক নতুন বাঁক নিয়েছে। বিশেষ করে এরদোয়ান তুরস্ককে যেভাবে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন ও উদ্ভাবন, আর্থিক খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসায় নিয়ে গেছেন, সেখানে বাংলাদেশও তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। এখন সবাই বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও সামরিক দিক দিয়ে বিবেচনা করে। তারা বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশের বড় বাজারের অংশীদার হতে চায়। তুরস্কের লক্ষ্যও তাই। বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে তাদের এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু এটা আরও বাড়াতে চান এরদোয়ান। সেই সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের দিকেও তাদের নজর।

অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দু দেশের মধ্যে সম্পর্কের যে শীতলতা, তা মূলত তৈরি হয়েছিল তুরস্কের এক সময়ের ধর্মীয়-রাজনৈতিক দর্শনের কারণে। তুরস্কের সঙ্গে যেহেতু পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো, তাই পাকিস্তানের কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে তুরস্ক মতামত দিয়েছিল। বাংলাদেশও তা শক্তভাবে মোকাবিলা করেছিল। এর মানে এই নয়, তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ ছিল। কূটনীতিতে সাউথ-সাউথ সম্পর্কের একটা কাঠামো আছে। এর একটা গুরুত্ব আছে। তাই হয়তো এখন আর্থিক ও সামরিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে নর্থ-নর্থ সম্পর্কের সঙ্গে সাউথ-সাউথ ফ্রেমকে সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি মনে করি না, কেবল রোহিঙ্গা ইস্যুতেই দুই দেশের সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করেছে বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতায় সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’

করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে একাধিকবার সহায়তার হাত বাড়িয়েছে তুরস্ক

অন্যদিকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে, তা অনেকটা নদীর স্রোতের মতো প্রবাহমান। সেখানে যেমন জোয়ার থাকে, তেমনি ভাটাও থাকে। তাই অনেক সময় একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের কোনো কাজ বা উদ্যোগকে সমর্থন যেমন করতে পারে, তেমনি অসমর্থনও করতে পারে। তার মানে এটা দাঁড়ায় না যে, সম্পর্ক এই অসমর্থনে নষ্ট হয়ে যায়। তুরস্ক-বাংলাদেশের বিগত সময়ের সম্পর্কও এ রকম বলেই আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘তুরস্কের তার আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি ও প্রভাব প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বর্তমান উষ্ণ সম্পর্কে এর কোনো প্রভাব নেই। কারণ আমরা তাদের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে দৃষ্টি মেলাইনা। তবে আমরা ধর্মীয়, ব্যবসায়িক ও দৃষ্টিভঙ্গি, খাবার ও চিন্তায় কিছুটা মিল খুঁজে পেতেও পারি।

সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, ‘নানা ইস্যুতে তুরস্ক বাংলাদেশের শক্ত সমর্থক। যেমন রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে তাদের নিজ ভিটায় ফিরিয়ে দিতে তুরস্ক শক্তিশালী দাবি তুলে যাচ্ছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দু দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থান করবেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তার।

ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন সফররত তুর্কি মন্ত্রী। এদিন বিকেলেই ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসের নবনির্মিত ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে তার।

বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় দেশের পথ ধরবেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তাকে বিদায় জানাবেন অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব সাব্বির আহমদ চৌধুরী।

এ বিভাগের আরো খবর