ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে। রুটিন অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ ৫ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষা নেয়া শুরু করবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশে পরীক্ষার সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকে বলছেন, হল না খুললে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হবে না।
গত ১০ ডিসেম্বর ইউজিসির অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী করোনার শুরুতেই ঢাকার বাইরে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। ফলে এখন পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে তাদের ঢাকায় এসে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব বিভাগে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, তা পুরোপুরি বিভাগের সিদ্ধান্তে হচ্ছে। আমরা কোনো ছাত্রের ওপর চাপ তৈরি করে পরীক্ষা নিচ্ছি না। প্রতিটা বিভাগ সব শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেই পরীক্ষার সিদ্ধান্তে আসছে। কোনো একজন শিক্ষার্থীরও যদি সমস্যা থাকে, সেই ক্ষেত্রে সেই বিভাগ পরীক্ষা সুবিধামত সময়ে নিবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একজন ছাত্রের সমস্যা থাকলেও পরীক্ষায় যাব না। এমনকি কিছু বিভাগ নিজ উদ্যোগে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করছে। কোনো ব্যাপারেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে না। বিভাগ শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে যে সিদ্ধান্তে আসবে, সেইটিই আমরা চূড়ান্ত বলে মেনে নিচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য বারবার আমাদের জানাচ্ছে। বিশেষ করে যারা অষ্টম সেমিস্টারে রয়েছে তাদের বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষাগুলোতে তারা অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ফলে তাদের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর চাপ রয়েছে বেশ।
‘তবে এখনও আমাদের অনুষদ পরীক্ষার রুটিনের ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। এর মধ্যে সরকার ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছে। এই ব্যাপারটিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। সবকিছু দেখেই আমরা সিদ্ধান্তে আসব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান আমাদের সকলের সাথে জুম মিটিং করতে চেয়েছেন। তিনি আমাদের সাথে সেইখানে আলাপ করে পরীক্ষার রুটিন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
‘তবে আমার জন্য ঢাকার বাইরে থেকে এসে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া খুবই কষ্টকর ব্যাপার হবে। শুধু হলে থেকে পরীক্ষা দেয়া গেলেই আমার পক্ষে পরীক্ষায় বসা সম্ভব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র বিভাগের চেয়ারম্যান হাবিবা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আপাতত শুধু অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছি। তবে সে ব্যাপারে আমি আগামীকাল নিজে অষ্টম সেমিস্টারের সব শিক্ষার্থীর সাথে জুম মিটিং করব। সেইখানে আমি তাদের সকল সমস্যা নিয়ে কথা বলব।
‘তবে আগামী মাসে একটি পরীক্ষা তাদের নেয়া হতে পারে। তারা যাতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয় সেইটা আমি তাদের বলব।’
ডাকসুর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা হলে থেকে পরীক্ষা দিতে চায়। তাদের দাবি হল না খুললে তারা পরীক্ষা দিবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় তাও যদি জোরপূর্বক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা যা বলবে আমরা সেটি নিয়েই প্রশাসনকে চাপ দিব।’