সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুল এলাকা। সকাল থেকেই এখানে লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন শতাধিক শ্রমিক। সড়কে গাড়ি দেখলেই তেড়ে যাচ্ছেন। এসব গাড়ির বেশিরভাগই ব্যক্তিগত। দুএকটি আছে বিদেশযাত্রী বহনকারী। এগুলোকেও বাধা দিচ্ছেন শ্রমিকরা।ব্যক্তিগত মাইক্রো নিয়ে এই সড়ক দিয়ে দুপুরে গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন নগরের আখালিয়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু চণ্ডিপুল আসার পর শ্রমিকরা আমার গাড়ি আটকে দেয়। আর যেতে দেয়নি। অথচ ব্যক্তিগত গাড়ি ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছিল তারা।’সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, উপশহর, সোবহানিঘাট, মদিনা মার্কেট, কুমারগাওসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। পরিবহন শ্রমিকরা লাঠি হাতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। গাড়ি দেখলেই তেড়ে যাচ্ছেন তারা। সিলেটের বন্ধ পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদের ডাকে মঙ্গলবার সকাল থেকে তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটে পুরো বিভাগে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।মঙ্গলবার সকালে সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির অপেক্ষায় আছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও কোনো বাস পাচ্ছেন না।এই এলাকায় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আত্মীয়ের অসুস্থতার জন্য জরুরি প্রয়োজনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য টার্মিনালে এসেছিলাম। মাইক্রোবাস পেলেও ভাড়া করে চলে যেতাম। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসেও কোনো গাড়ি পাইনি। ফলে এখন বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে।’বাস বন্ধ থাকায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রীকেই হট্টগোল করতে দেখা যায়।ট্রেনের টিকিট কিনতে আসা কলেজছাত্র মইনুল হক বলেন, জনসাধারণকে জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে পরিবহন শ্রমিকরা। দ্রুত এমন কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।তবে ধর্মঘট আহ্বানকারীরা বলছেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সিলেটের ট্রাক মালিকরা গভীর সঙ্কটে পড়েছেন। এছাড়া জাফলং ও গোয়াইনঘাট সড়কে বাস-অটোরিকশার যাত্রীও অনেক কমে গেছে। ফলে সকলেই ক্ষুব্ধ। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে সকল পরিবহনের শ্রমিক-মালিকরা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা এ ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠন সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ট্রাক মালিকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছি। তাতে কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ধর্মঘট ডেকেছি। তিন দিনের ধর্মঘটেও পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে আমরা টানা ধর্মঘটে যাবো।’ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দুএকটা ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। তবে আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছি না বরং সহায়তা করছি।’সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের নামে বিশৃঙ্খলা করলে কিংবা জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছানাকান্দি ও লোভছড়া- এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বেলা)-এর করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত।
পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগ চরমে
পরিবহন শ্রমিকরা লাঠি হাতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। যানবাহন দেখলেই তেড়ে যাচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না ব্যক্তিগত গাড়িও। ধর্মঘটে পুরো বিভাগে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন।
-
ট্যাগ:
- ধর্মঘট
এ বিভাগের আরো খবর/p>