বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাতীয় সংগীত-পতাকা: বরফ গলছে কওমি ঘরানায়

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:২৭

রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় জাতীয় দিবসে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়, উত্তোলন হয় জাতীয় পতাকা। একটি শিল্পীগোষ্ঠী দেশাত্মবোধক গান করছে নিয়মিত, জাতীয় সংগীতেও তাদের আপত্তি নেই।

বিজয় দিবসে কওমি ঘরানার শিল্পীগোষ্ঠীর গাওয়া একটি গান ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

বাদ্যযন্ত্র ছাড়া চরমোনাইয়ের পীরপন্থি ‘কলরব শিল্পী গোষ্ঠী’র গাওয়া খান আতাউর রহমানের লেখা ও সুর করা ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/ বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না’ গানটি অবশ্য নতুন নয়। আগেই এর ভিডিও ছিল। এবার সেটি প্রচার হয়েছে ব্যাপক আকারে।

আরও কয়েকটি ছবি এবার সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে। এগুলোতে দেখা যায়, কওমি মাদ্রাসার শিশুরা তাদের বুকে জাতীয় পতাকা নিয়ে পড়াশোনা করছে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ধামরাইয়ের একটি কওমি মাদ্রাসা থেকে আসা প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শহিদদের।

এই প্রবণতা একেবারেই সাম্প্রতিক। কওমি ঘরানায় জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা, জাতীয় পতাকার ব্যবহার, দেশাত্মবোধক গানের চল কয়েক দিন আগেও ছিল না। এগুলোকে হারাম বলে বক্তব্য দেয়া হতো।

কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর শিশু কিশোর বিভাগের পরিচালক আবু রায়হান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে দেশাত্মবোধক গানগুলো করছি।

‘আমাদের প্রায় ১০০ জনের একটি টিম আছে। এসব গানের রেকর্ডিং, ভিডিও এডিটিংয়ের সমস্ত কাজ আমরা নিজেরাই করছি।’

তিনি বলেন, ‘গানের সাথে ইসলামের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা তো উইদাউট মিউজিক কাজ করছি। মিউজিকের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু কথা আছে। এ কারণে আমরা মিউজিক টোটালি অ্যাভোয়েড করি। আমরা জাস্ট অনলি ভোকাল ব্যবহার করি।’

‘আপনারা জাতীয় সংগীত কখনও গেয়েছেন কি?’

‘হ্যাঁ, আমরা জাতীয় সংগীত গেয়েছি। তবে জাতীয় সংগীতের কোনো রেকর্ডিং করা হয়নি’, উত্তরে বলেন তিনি।

বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনের মধ্যে কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত তো গাওয়াই হয় না, উল্টো বিভিন্ন ওয়াজ বা মাহফিলে ‘আমার সোনার বাংলা’র বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হয়। দাবি করা হয়, এটা গাওয়া আল্লাহর সঙ্গে সমকক্ষ করার শামিল, যা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় অপরাধ।

তবে কলরব মনে করে, এটা ঠিক নয়।

রায়হান বলেন, “অনেককে আপত্তি করতে শুনেছি, সেটা হচ্ছে, এখানে বলা হয় ‘আমার সোনার বাংলা’। অনেকেরই চাওয়া ‘সোনার বাংলা’ না হয়ে যেন ‘সোনার বাংলাদেশ’ হয়। আদারওয়াইজ আর কোনো আপত্তি নাই।”

এবার বিজয় দিবসে একটি কওমি মাদ্রাসায় সব শিক্ষার্থীর গায়ে জড়ানো জাতীয় পতাকার ছবি কওমি ঘরানার বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ব্যাপক হারে শেয়ার হয়েছে। আবার বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে ও হাতে নিয়ে মিছিলও করেছে কওমি মাদ্রাসার শিশুরা।

স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহিদ দিবস ঘটা করে পালন হয় রাজধানীর রামপুরার হাজীপাড়ার ঝিলপারের কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইকরা বাংলাদেশে।

সেখানে সমাবেশের সময় ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। সেসব দিনে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এ জন্য ছাত্রদের পুরস্কৃতও করা হয়।

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে মাদ্রাসায় করা হয় দেয়ালিকা। সেখানে বিজয় দিবস, স্বাধীনতাসহ নানা বিষয় নিয়ে লিখেছে শিক্ষার্থীরা। সেই দেয়ালিকা এখনও রয়ে গেছে সেখানে।

মাদ্রাসার শিক্ষক মুহাম্মদুল্লাহ ইয়াহইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে স্কুল শাখা আছে। সেখানে সমাবেশের সময় জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। এ ছাড়া বিজয় দিবসসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় দিনে আমরা মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উড়াই।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় দিবসগুলোতে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের ক্লাস বন্ধ থাকে। স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে অন্য অনুষ্ঠান হলেও ক্লাস বন্ধ থাকে।

‘সেদিন দেশাত্মবোধক ও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে অনুষ্ঠান হয়। দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছে সেই শহিদদের জন্য আমরা দোয়া করি ও তাদের স্মরণ করি।’

তিনি বলেন, ‘মূল বিষয়টা হলো দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা আমাদের মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে। আমরা এ কারিকুলাম করেছি, শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের মধ্যে দেশাত্মবোধ তৈরি হতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুস সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি এগুলা পজিটিভ। কেউ যদি তাদের পূর্ব অবস্থান থেকে বের হয়ে এসে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চায় এবং সেটা যদি প্রকৃত অর্থেই দেখাতে চায়, তবে সেটাকে আমার মনে হয় স্বাগত জানানো উচিত।’

তিনি বলেন, ‘যদি তাদের ভেতর থেকে পরিবর্তনটা হয়ে থাকে অর্থাৎ, তারা যদি মনে করে যে পূর্বপুরুষ যেটাই করুক, আমরা আমাদের দেশকে ভালবাসি, এই বোধ থেকে যদি তারা এটা করে ও তাদের পূর্বপুরুষের বোধ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তাহলে আমি মনে করি সেটা ইতিবাচক।’

এবার বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ধামরাইয়ের মাদ্রাসাতুল আল-নুর থেকে একদল শিক্ষার্থী।

এদের একজন মো. জাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে এসে শহিদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। বাংলাদেশি হিসেবে মনের কোণে এই দিনটায় আবেগ অনুভব করি। এ জন্যই এখানে এসেছি। এত মানুষ দেখে বেশ ভালো লাগছে।’

কয়েক দশক আগে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া সম্বোধন না করলেও ইদানীং জাতির পিতাকে বঙ্গবন্ধু বলা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। একসময় কঠোর নিন্দা করলেও প্রশংসা করা হচ্ছে তার।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতো কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ও এই ঘরানার মানুষদের মধ্যেও পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করা লোক ছিল।

সে সময় এই ঘরানার দুটি রাজনৈতিক দল সারা দেশে কাজ করত। একটি নেজামে ইসলাম পার্টি, অন্যটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এর মধ্যে নেজামে ইসলাম পার্টির প্রায় পুরোটাই পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। জমিয়তের একটি অংশ পাকিস্তানি বাহিনীর দালালি করলেও একটি অংশ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। যদিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার পক্ষে প্রমাণ পাওয়া কঠিন।

তবে বেশ কিছু মাজার ও এই ঘরানার সংগঠন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর