বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রশ্নে ফের বিতর্ক

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ ২৩:১৫

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ হওয়ার আগে উচ্চ আদালতের বিচারকসহ সাংবিধানিক বিভিন্ন পদের ব্যক্তিদের অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের এখতিয়ার ছিল রাষ্ট্রপতির। তবে এই সংশোধনী উচ্চ আদালত বাতিল করায় এবং রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় পুরো বিষয়টিকে ঘিরে রয়েছে অস্পষ্টতা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান বিদ্যমান আছে কিনা- তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সাংবিধানিক বিতর্ক। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান নেই। ফলে সাংবিধানিকভাবে এ ধরনের কাউন্সিল করার সুযোগ নেই রাষ্ট্রপতির।

অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণের সময়ে আপিল বিভাগ রায়টি স্থগিত না করে থাকলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান এখনও বিদ্যমান। আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকও একই ধরনের মত দিচ্ছেন।

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ হয়। তবে এ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টের নয় আইনজীবী রিট করেন। এরপর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। এরপর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদন এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ হওয়ার আগে উচ্চ আদালতের বিচারকসহ সাংবিধানিক বিভিন্ন পদের ব্যক্তিদের অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের এখতিয়ার ছিল রাষ্ট্রপতির। তবে এই সংশোধনী উচ্চ আদালত বাতিল করায় এবং রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় পুরো বিষয়টি ঘিরে রয়েছে অস্পষ্টতা।

৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের অনুরোধের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নাই।

‘সরকার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ভিন্ন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট একটা রায়ের মাধ্যমে সেই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবে ওই রায়ের রিভিউ এখন বিচারাধীন।’

এখন সাংবিধানিক পদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরাহা কীভাবে হবে- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এখন কোনো অভিযোগ এলে রিভিউ শুনানি শেষ করার পর সিদ্ধান্ত হবে কোন প্রক্রিয়ায় তদন্ত হবে।’

এক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো শূন্যতা বিরাজ করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, সাংবিধানিক শূন্যতা নেই, তবে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা আছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আছে। ওনারা করতে পারেন। কোর্ট খোলার পরেই এটা শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে।

‘রিভিউ যেহেতু পেন্ডিং আছে, এ অবস্থায় কিছুই বলতে পারব না। ’

রিভিউয়ের সময় আদালত রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কিনা- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রিভিউ করলে স্থগিত করার দরকার হয় না। এমনিতেই রিভিউ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রায় স্থগিত থাকবে, যেহেতু এর কোনো চূড়ান্ত পরিণতি হয়নি।’

তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করছেন, রিভিউ আবেদন করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রায় স্থগিত হয়ে যায় না।

‘ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় রিভিউ আবেদনে আবেদনকারীদের রায়টি স্থগিত করার বিষয়টি চাইতে হবে। আদালতকেও স্থগিতাদেশ দিতে হবে। যদি আদালত স্থগিত করে থাকে তাহলে রায় নাই, আর স্থগিত না করলে বিদ্যমান আছে।’

তবে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার যৌক্তিকতা কী সেটা দেখতে হবে। একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চাইলেই অভিযোগ আনা যাবে না। তাহলে তো কথায় কথায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের কথা বলবে সবাই।’

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিদ্যমান আছে কিনা- জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃস্থাপন করেছে। এখন অ্যাটর্নি জেনারেল যদি বলে থাকেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নাই, তাহলে দেশে এক অদ্ভূত পরিস্থিতি হবে না?

‘অদ্ভুত এই অর্থে যে, সংবিধানে বিচারপতিদের বিষয়ে বলা আছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারিত হবেন। নির্বাচন কমিশন চ্যাপ্টারে বলা আছে বিচারপতিরা যেভাবে অপসারিত হন, নির্বাচন কমিশনারও সেভাবে অপসারিত হবেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ব্যাপারেও বলা আছে, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের বিষয়েও ঠিক একইভাবে বলা আছে।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠান ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের বর্তমান সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত। তারা একদিকে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ। তারা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন করে গুরুতর অসদাচরণ করে চলেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর