বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইভী সমর্থকদের বিরুদ্ধে সেই নিয়াজুলের হত্যাচেষ্টা মামলা

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:২৭

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে আইভী ও শামীম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের সময় অস্ত্র হাতে দেখা যায় যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলামকে।

তিন বছর আগে নারায়ণগঞ্জে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের দিন অস্ত্র হাতে ছবি আসা নিয়াজুল ইসলাম চার কাউন্সিলরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন।

আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আইভীর স্বজন। আর নিয়াজুল শামীম ওসমানের কর্মী।

সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাহমিদা খাতুনের আদালতে এই মামলা করেন নিয়াজুল। সেটি আমলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ২০২১ সালের ২২ মার্চের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে আইভী ও শামীম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের সময় অস্ত্র হাতে দেখা যায় যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলামকে।

মামলায় নিয়াজুল অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের দিন তাকে মারধর করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।

তিন বছর আগে চাষাঢ়ায় শামীম সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় মেয়র আইভীকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করেন তার সমর্থকরা

নিয়াজুলের মামলায় আসামি করা হয়েছে মেয়র আইভীর সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, আইভীর ছোট ভাই ও শহর যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জ্বল, আমিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, শহর যুবলীগের সহসভাপতি কামরুল হুদা বাবু, হাজী নেওয়াজ, সরকার আলম, সৈকত মেম্বার, মোতালেব, ফারুক, অপু, মেয়র আইভীর ভাগিনা মিনাজুল কাদির মিমন, ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর যুবদল নেতা মাকসুদুল আলম খোরশেদ, ১৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন ও ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হান্নান সরকারকে।

নারায়ণগঞ্জের আদালত পুলিশের পরির্দশক আসাদুজ্জামান নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘শহরে হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিয়াজুল ইসলাম ১৭ জনের নামে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

এই মামলার প্রতিক্রিয়ায় শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আইভীর ছোট ভাই আলী রেজা উজ্জ্বল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন সন্ত্রাসীর মামলা কীভাবে নেয়া হয়? নিয়াজুল মেয়র আইভী করার জন্য পিস্তল তাক করেছে এটা সবাই দেখেছে। তারা মেয়রকে হত্যার চেষ্টা করেছে। প্রায় তিন বছর পর আমাদের নামে মামলা করে নারায়ণগঞ্জে নতুন ইস্যু তৈরি করছে। এটি একটি ভিক্তিহীন মামলা।’

সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ বলেন, ‘কয়েক বছর পর একটি অযৌক্তিক মামলা করেছেন নিয়াজুল।’

সেদিন নিয়াজুলের ভূমিকা

তিন বছর আগে চাষাড়ায় সেই সংঘর্ষে মেয়র আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার সময় পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন যুবলীগের নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান। ঘটনার পরদিন সন্ধ্যায় সেই পিস্তলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুতে ওই পিস্তলের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেন নিয়াজুল। ২২ জানুয়ারি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাব্বী মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নিয়াজুলের পিস্তলের লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে আইনি মতামত জানতে চাওয়া হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

তদন্তে বলা হয়, নিয়াজুল ইসলামের অস্ত্র নবায়ন করা হলে যেকোনো সময় লাইসেন্সধারী অস্ত্র দিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। আগ্নেয়াস্ত্র শাখা থেকে ইস্যু করা পিস্তলটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নবায়ন করা ছিল।

সেই সংঘর্ষের কূলকিনারা হয়নি

আলোচিত সেই সংঘর্ষে আইভীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর দুটি মামলা হয়েছিল, তার একটিতে কাউকে শনাক্ত করতে না পেরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। অন্য একটি মামলার তদন্ত এখনও শেষ করা যায়নি।

ঘটনার পরদিন ১৭ জানুয়ারি মেয়র আইভীর ভাই ও সমর্থকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ নিয়াজুল ইসলাম।

অন্যদিকে আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২২ জানুয়ারি নিয়াজুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।

সংঘর্ষের সময় চাষাঢ়ায় উপস্থিত ছিলেন আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানও

তবে পুলিশ অভিযোগ দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে রেকর্ড করে। ২২ মাস ১৮ দিন পর ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর মডেল থানায় দেয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, জখম, নাশকতা, ভাঙচুরসহ অরাজকতার অভিযোগ আনা হয়।

আরও এক মাস পর পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

ডিসেম্বরের শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) টিপু সুলতান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। ঘটনার সময়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনার সাক্ষী ও আহত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।’

মামলার আসামি নয় জন। তারা হলেন নিয়াজুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগকর্মী নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির, যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদ।

পুলিশের মামলায় কেউ শনাক্ত হয়নি

মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমান সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনার আট দিন পর ২৪ জানুয়ারি রাতে আরেকটি মামলা করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন।

ওই মামলায় পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান। সদর থানার রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনা সত্য। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে রেজিস্ট্রারে।

এ বিভাগের আরো খবর