বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা প্রযুক্তির অভাবে

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৩৯

দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অনিরাপদ রেলক্রসিং। আর এর পেছনে লোকবলের অভাবের বিষয়টি ওঠে আসে বারবার। অথচ আধুনিক রেল ব্যবস্থাপনায় এমন সহজলভ্য প্রযুক্তিও রয়েছে যা দিয়ে সীমিত লোকবলেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় রেল ক্রসিং, এড়ানো যায় দুর্ঘটনা।

অরক্ষিত, অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত রেল ক্রসিংগুলোতে নিরাপত্তার অভাবে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এর পেছনে রেল কর্তৃপক্ষ সচেতনতার অভাবকে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা দেখছেন আধুনিক প্রযুক্তির অভাবের কথা।

দেশে প্রতি বছরেই রেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। গত শনিবার ভোরে জয়পুরহাটের পুরানাপৈল রেলক্রসিংয়ে রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাসের ১২ জন যাত্রী নিহত হয়

পুরানাপৈল রেলক্রসিংটি অনুমোদিত। সেখানে তিন জন গেটকিপার পালা করে কাজ করেন। এদের মধ্যে দুই জন স্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন আরেক জন। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা নয়ন হোসেন ছিলেন ঘুমিয়ে।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর ফেনী সদর উপজেলার ফতেহপুরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের ধাক্কায় বাসের তিন যাত্রী নিহত হয়। পুলিশ জানায়, রেলক্রসিংয়ে গেইট না থাকার কারণে সহজে ঢুকে পড়ে বাসটি।

৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় ট্রেনের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় দুই জন নিহত হয়। ৪ ডিসেম্বর যশোরের একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়।

১৬ অক্টোবর যশোর অভয়নগরস্থ একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে খুলনাগামী একটি ট্রেন প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে ৬ জনের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গত দুই বছরে রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৪টি। এতে প্রাণ গেছে ৭১ জনের, আহত ৮৩। ২০১৯ সালে রেল ক্রসিংয়ে ৩৫টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪৭ জনের। ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৯টি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৪ জন।

এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অনিরাপদ রেলক্রসিং। আর এর পেছনে লোকবলের অভাবের বিষয়টি ওঠে আসে বারবার। অথচ আধুনিক রেল ব্যবস্থাপনায় এমন সহজলভ্য প্রযুক্তিও রয়েছে যা দিয়ে সীমিত লোকবলেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় রেল ক্রসিং, এড়ানো যায় দুর্ঘটনা।

ঠিক তেমনই মত দিলেন বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ।

রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে অটোম্যাটিক সিগন্যালের গুরুত্বের কথা জানিয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। ট্রেন আসার আগে যেন একটা লাইট জ্বলে সতর্কতা সৃষ্টি করা যায় বা সাইরেন বাজিয়ে বোঝানো যায় তেমন পদ্ধতি চালু করতে হবে।’

একই রকম মন্তব্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক-উর রহমানেরও- ‘সবক্ষেত্রে তো আমাদের একশ বছর পুরোনো নিয়মে চলা যাবে না। আধুনিক হতে হবে রেলক্রসিং পদ্ধতিতে।’

নিউবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘সচেতনতা সবক্ষেত্রেই লাগবে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু শুধু সচেনতার ওপর ছেড়ে দিয়ে তো এত বড় একটা বিষয়ে দায় এড়ানো যাবে না।

‘আমাদের যেসব রেলক্রসিং আছে সে বিষয়ে আমরাও জানি আবার মন্ত্রাণালয়ও জানে। এখানে যেমন তারা বৈধগুলোর বিষয়ে জানেন তেমন অবৈধগুলোর বিষয়েও ধারণা রাখেন। তবে কেনো তারা অবৈধগুলো বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয় না।’

রেলওয়ের সুত্র মতে, সারা দেশে ২ হাজার ৯৫৯ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিং আছে ২ হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে বৈধ ১ হাজার ৪৯৫টি এবং অবৈধ ১ হাজার ৩৬১টি। কোনো গেটম্যান নেই ৯৬১টিতে। এসব ক্রসিংয়ের বেশির ভাগ তৈরি হয়েছে এলজিইডি, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার কারণে।

রেলওয়ের তথ্যে জানা যায়, গত পনেরো বছরে এসব স্থানে প্রায় পাঁচ হাজার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ৪১৯ জন। আহত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার।

রেল মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বৈঠকে দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক রেলক্রসিংয়ের পরিবর্তে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, আন্ডারপাস নির্মাণ, অননুমোদিত রেলক্রসিং বন্ধ করার কথা বলা হয়।

এছাড়া প্রয়োজনীয় স্থানে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া, ভবিষ্যতে রেলের অনুমতি ছাড়া রেলক্রসিং নির্মাণ রোধ করাসহ নানারকম সিদ্ধান্ত নিলেও এগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে, ক্রমেই মৃত্যু আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে রেল ক্রসিংগুলো।

অনেক ক্ষেত্রে ‘এই গেটে কোনো গেটম্যান নাই, পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবেন’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙিয়েই দায় সারছে রেল কর্তৃপক্ষ।

ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা রোধে অব্যবস্থাপনা নিরসন বা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বদলে মানুষজনকেই সচেতন হওয়ার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় আমাদেরকে সচেতন হয়ে চলাচল করতে হবে। যে গাড়ি চালাচ্ছে তার দায় বেশি। ট্রেন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’

জয়পুরহাটের ঘটনাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে গেটকিপার ছিল সে ঘুমিয়ে থাকলেও বাসে তো তিন জন লোক থাকেন। তারাও কি ঘুমিয়ে ছিলেন?

‘আমার গাড়ি আমার তো একটা দায় দায়িত্ব থাকে। আমি নিজে ড্রাইভার, আমার সঙ্গে একজন হেল্পার আছে, সুপারভাইজার আছে। তারা কেন দেখবে না যে এত বড় একটা ট্রেন যাচ্ছে। তারা কিভাবে ট্রেনের সামনে গিয়ে পড়ে।’

নতুন রেলপথে ঠিকভাবেই ক্রসিং করা হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন যেগুলো আছে সেগুলো ঠিক হচ্ছে। তবে পুরাতনগুলোর ক্ষেত্রে মানুষের এখন সামর্থ্য বাড়ছে, রাস্তাঘাটের পরিমাণও বাড়ছে সেক্ষেত্রে রেলের ওপর দিয়ে রাস্তার সংযোগ বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে মানুষকে আরও সাবধান হতে হবে।’

লোকবলের বিষয়টি তুলতেই রেল মন্ত্রী বলেন, ‘কত লোকবল নিব? এক একটা ক্রসিং এ পাহারাদারসহ তিন জন লোক লাগে। কত লোক এখানে নেয়া যাবে?’

এ বিভাগের আরো খবর