ব্যানারে লেখা ‘সেলুন লাইব্রেরি’। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল আসলে তা সেলুনই। কিন্তু গ্রাহকদের হাতে হাতে বই।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নে গেলে দেখা মিলবে এমন কিছু সেলুনের।
সারপুকুরে ‘যুব ফোরাম’ এই ইউনিয়নের একটি পাঠাগার। প্রতিষ্ঠাতা সেখানকার বাসিন্দা জামাল হোসেন। এই পাঠাগার থেকেই উপজেলার ৩০টি সেলুনে সরবরাহ করা হয় বই।
কিন্তু সেলুনে কেন বই?
পাঠাগার বিশিষ্ট সেলুন। ছবি: নিউজবাংলাএ প্রশ্নের উত্তরে জামাল জানালেন, জায়গা কম থাকায় সেবা নেয়ার জন্য সেলুনগুলোতে সিরিয়াল দিয়ে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয় গ্রাহকদের। এই সময়টা অনেকেই সেখানে মোবাইল ফোনে, ধূমপান করে কিংবা অপ্রয়োজনীয় আলাপে কাটিয়ে দেয়। সেবা নিতে থাকা গ্রাহকরা তাতে বিরক্তও হয়।
এসবের চমৎকার বিকল্প হতে পারে বই। এতে সময় কাটানোর পাশাপাশি বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহও ফিরে আসবে, সেলুনের পরিবেশও ভালো থাকবে।
এসব চিন্তা থেকে নিজ পাঠাগারের বই নিয়ে সেলুনগুলোতে দেন জামাল। ২০১৪ সাল থেকে চালু করেছেন এই কার্যক্রম। এখন দেখা যায়, সাধারণ সেলুনগুলোর চেয়ে এই লাইব্রেরি সেলুনেই ভিড় বেশি গ্রাহকদের।
সেলুন লাইব্রেরিতে বই পড়ায় ব্যস্ত অপেক্ষমাণ গ্রাহকরা। ছবি: নিউজবাংলাসেলুনগুলোতে প্রতি সপ্তাহে বই বদলে দেয়া হয়। বিনা মূল্যেই সেগুলো সরবরাহ করে যুব ফোরাম। সেলুনে বসে পড়া শেষ না হলে গ্রাহক চাইলে বিনা মূল্যে বাসায়ও নিয়ে যেতে পারেন সেগুলো।
টিউশনি ও খণ্ডকালীন চাকরির উপার্জন জমিয়ে এই পাঠাগারগুলো চালু করেন লালমনিরহাট সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র বইপোকা জামাল। বলেন, গোটা জেলাতে এমন অন্তত ১০০টি সেলুন লাইব্রেরি গড়ার লক্ষ্য তার।
সেলুনে আসা এক তরুণ জানান, করোনাভাইরাস মহামারিতে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। পড়াশোনাই তেমন হতো না। এই পাঠাগার থাকায় বই পড়ে ভালো সময় কাটছে, জ্ঞান অর্জনও হচ্ছে।
যুব ফোরামের এই উদ্যোগের প্রশংসায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছে সেলুনের লাইব্রেরি। আমি নিজেও সেখানে গিয়েছি। এর প্রচার-প্রসারে আমরা সহযোগিতা করব।’