১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর দুপুর। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুরে যুদ্ধ শুরু হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে। হঠাৎ একটি গুলি লাগল ইলিয়াস চৌধুরীর বুকে। মাথার গামছা খুলে সহযোদ্ধার বুক বেঁধে দিয়ে দাস বাহিনীর কমান্ডার জগৎজ্যোতি বললেন, ‘বাঁচবি?’ তরুণ ইলিয়াসের জবাব, ‘বাঁচতে পারি।’ এবার জগৎজ্যোতির নির্দেশ, ‘তাহলে যুদ্ধ কর।’
এই যুদ্ধে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ইলিয়াস চৌধুরী; শহীদ হন জগৎজ্যোতি দাস।
সেই ইলিয়াস নিউজবাংলাকে শুনিয়েছেন জগৎজ্যোতি ও তার দলের বীরত্বের কাহিনী।
তিনি জানান, যুদ্ধে জগৎজ্যোতির নামে ‘দাস পার্টি’ নামে আলাদা বাহিনী গঠিত হয়। অসীম সাহসী ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণদের এ বাহিনী বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলে শত্রুদের কাছে ছিল আতঙ্কের নাম। যুদ্ধের সময় উত্তরপূর্ব রণাঙ্গণের মুক্তি সেনাদের কাছে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন জগৎজ্যোতি ও তার দাস পার্টি।
১৬ নভেম্বর সন্ধ্যার আগে আগে নিজ গ্রাম জলসুখার পাশেই শহিদ হন দাস পার্টির তরুণ কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাস। এর অনেক আগেই ‘টেরর দাস’-এর মাথার দাম ঘোষণা করেছিল হানাদাররা। কাকতালীয়ভাবে মাথায়ই গুলি লাগে তার। ‘আমি যাইগ্যা’ বলে সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে বিদায় নেন তিনি।
বিলের কাদাপানিতে কমান্ডারের মরদেহ ঢেকে রেখে সেদিন কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ফিরেছিলেন ইলিয়াস।
তিনি জানান, কিন্তু পরদিন বৃষ্টি হয়, বিলে ভেসে ওঠে জগৎজ্যোতির মরদেহ। সেই মরদেহ নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ায় পাকিস্তানি হানাদাররা। তার বাবা-মাকে ঘর থেকে টেনে এনে ছেলের মরদেহ দেখানো হয়। পরে পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের বসতঘর।
এরপর আজমিরীগঞ্জ বাজারের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে তার মরদেহ এমনভাবে রাখা হয় যাতে তার ভয়ংকর পরিণতি সবাই দেখতে পারে। এ ঘটনার একটি ছবি পাওয়া যায়।
শহর থেকে ফটোগ্রাফার ভাড়া করে পাকিস্তানি সেনারাই ছবিটি তুলিয়েছিল। এই ছবি দেখলে জগৎজ্যোতিকে যীশু খ্রিষ্টের মতো মনে হয়। যীশুর মতোই খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় তার মরদেহ। বাঁধা অবস্থায়ই অস্ত্র দিয়ে খোঁচানো হয় নিথর দেহ। জগৎজ্যোতির গাঁয়ে থু থু ফেলে রাজাকাররা। পরবর্তী সময়ে মরদেহটি ভাসিয়ে দেয়া হয় ভেড়ামোহনার পানিতে।
এ ঘটনার ঠিক এক মাস পর বাংলাদেশ পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়।
জগৎজ্যোতিকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। কিন্তু স্বাধীনতার পর তার ভাগ্যে সর্বোচ্চ সম্মান মেলেনি, মিলেছে ‘বীর উত্তম’ খেতাব।
জগৎজ্যোতি যেখানে শহিদ হয়েছেন, সেখানে নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। তার গ্রামেও নেই এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কোনো স্মৃতিচিহ্ন। তার পরিবারও পায়নি কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা। এক খণ্ড জমির আশ্বাস দেয়া হলেও তা আশ্বাসই রয়ে গেছে। বেঁচে থাকা জগৎজ্যোতির একমাত্র ভাতৃবধূ থাকেন নিজের মেয়ের বাড়িতে।
‘ভাটির বীরশ্রেষ্ঠ’
হবিগঞ্জের হাওরবেষ্টিত আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল জন্ম নেন জগৎজ্যোতি দাস। বাবা জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও মা হরিমতি দাসের ছোট সন্তান তিনি। তার বাবা ও বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মেট্রিক পাস করেন জগৎজ্যোতি। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতের অসমে কাকার বাড়ি যান। এর আগে স্থানীয় বীরচরণ হাইস্কুলে পড়ার সময়ই ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি, জড়িয়ে পড়েন বামধারার রাজনীতিতে।
অসমে জগৎজ্যোতির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর মারা যান তার কাকা ননীগোপাল দাস। হুমকিতে পড়ে তার শিক্ষাজীবন। চাচাতো ভাই তাকে ভর্তি করিয়ে দেন সেখানকার সেনাবাহিনীতে। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে ঢোকার দুদিন আগে বাংলাদেশে ফিরে আসেন জ্যোতি।
এরপর নিজ গ্রাম জলসুখার কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক হাইস্কুলে ৭৫ টাকা বেতনের শিক্ষকতার চাকরি নেন। পরে চাকরি ছেড়ে সুনামগঞ্জ কলেজে গিয়ে স্নাতকে ভর্তি হন।
১৯৭১ সালে জগৎজ্যোতি ছিলেন সুনামগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সারির কর্মী। যুদ্ধের শুরুতে সুনামগঞ্জ সীমান্তের ওপারে মেঘালয় রাজ্যের বালাটে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেই পরিচয় ইলিয়াস চৌধুরীর সঙ্গে।
ইলিয়াস বলেন, ‘শরণার্থী শিবিরে স্থানীয় কিছু খাসিয়া অনেক জ্বালাতন করত। মারধর করে টাকা-পয়সা নিয়ে যেত। জগৎজ্যোতি এসবের প্রতিবাদ করেন। শরণার্থী কয়েকজন তরুণকে নিয়ে একটা দল গঠন করেন। একদিন খাসিয়ারা আক্রমণ করতে এলে পাল্টা আক্রমণ করে জগৎজ্যোতির দল।’
এ ঘটনার পর থেকে ইলিয়াস ছিলেন ‘প্রিয় দাদার’ দোসর। টেকেরঘাটের আরেকটি ঘটনা শুনিয়েছেন ইলিয়াস চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘‘টেকেরঘাট শরণার্থী শিবিরে আয়োজন করা হয়েছিল দুর্গাপূজার। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় জওয়ানরা অংশ নিয়েছিলেন। পূজামণ্ডপে হিন্দিভাষী এক জওয়ান বাঙালি এক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় জ্যোতিদা তার মাথা ফাটিয়ে দেন। এ ঘটনায় জ্যোতি ও তার দলের কয়েক জনকে আটক করে নেয়া হয় মেজর ভাটের দপ্তরে।
“সেখানে জ্যোতি বলেন, ‘পাকিস্তান আর্মির যে আচরণের জন্য আমরা অস্ত্র হাতে নিয়েছি, সেই আচরণ ভারতীয় বাহিনীর কাছ থেকে পেয়েছি বলেই আঘাত করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের গুলি করতে হলে করুন, কিন্তু হাত বাঁধা অবস্থায় না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা, ক্রিমিনাল না।’ জ্যোতির এমন সাহসী উচ্চারণে মন গলে ভারতীয় মেজরের। কয়েকটা বাংকার খোড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের শাস্তি।’’
বালাটের শরণার্থী শিবির থেকে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সদলবলে শিলংয়ে ট্রেনিংয়ে যান জ্যোতি। নেতৃত্বগুণ, সাহসিকতা, কঠোর পরিশ্রম এবং ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার দক্ষতার জন্য সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়েন তিনি। জ্যোতির নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে ‘দাস পার্টি’।
মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়ে দাস পার্টির ওপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার নৌপথ পাকিস্তানি দখলমুক্ত রাখতে যুদ্ধ করে তারা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রসদবাহী জাহাজ ডোবানো, অস্ত্রবাহী লঞ্চ দখল, রাজাকারদের নৌকা উড়িয়ে দেয়ার কাজ সাফল্যের সঙ্গে করতে থাকে এ বাহিনী।
দাস পার্টির আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দেয়, ওই নৌপথ দিয়ে চলাচলকারীদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না।
বানিয়াচংয়ে হানাদারদের প্রায় ২৫০ সদস্য ও তাদের দোসরদের পিছু হটতে বাধ্য করেন জ্যোতি। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের ৩৫ জন মারা যায়। ১৭ আগস্ট পাহাড়পুড়ে তার বুদ্ধি ও বীরত্বে রক্ষা পায় অসংখ্য বাঙালির প্রাণ। এ যুদ্ধে মারা যায় শতাধিক রাজাকার। ভেড়ামাড়ায় শত্রুদের কার্গো কনভয় ধ্বংস করে দেয়া হয়। জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জে রাজাকারদের ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয় দাস পার্টি। মার্কুলিতে দুই শতাধিক রাজাকারের আস্তানা দখল করা হয়। সদরপুর ব্রিজ উড়িয়ে ঠেকিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানিদের।
জামালগঞ্জ থানা ভবন দখলের মধ্য দিয়ে জামালগঞ্জ মুক্ত করার যুদ্ধ শুরু। এ যুদ্ধে শহিদ হন দাস পার্টির সিরাজুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে সিরাজুলকে বীর বিক্রম খেতাব দেয়া হয়। এরপর শ্রীপুর শত্রুমুক্ত করেন জগৎজ্যোতি।
আগস্ট মাসে দিরাই-শাল্লায় অভিযান চালিয়ে কোনো গুলি ব্যয় না করেই কৌশলে আটক করা হয় ১০ জন রাজাকারের একটি দলকে। রানীগঞ্জ ও কাদিরীগঞ্জে অভিযান চালিয়েও দাস পার্টি আটক করে রাজাকারদের।
‘চক্রব্যুহে অভিমন্যু’
১৬ নভেম্বর ভোরে দাস পার্টির ৪২ জনকে নিয়ে নৌকায় হবিগঞ্জের বাহুবলের দিকে রওনা দেন জগৎজ্যোতি। পথে বদলপুর ইউনিয়ন অফিসের সামনে রাজাকারদের পাতা ফাঁদে পড়ে যান তারা। তিন-চার জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটকে চাঁদা আদায় করছিল। ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হঠতে থাকে রাজাকাররা।
১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। এদিকে পাকিস্তানি সেনারা বিশাল বহর আর প্রচুর গোলাবারুদ নিয়ে দুই দিকে ঘাপটি মেরে ছিল। সেই চক্রব্যুহে ঢুকে পড়ে দাস পার্টি। শুরু হয় যুদ্ধ। ফুরিয়ে আসতে থাকে গোলাবরুদ। হতাহত হন অনেকে।
বিকেল পৌনে ৫টা। জ্যোতির অস্ত্রভান্ডার প্রায় শূন্য। সহযোদ্ধা বলতে কেবল গুলিবিদ্ধ ইলিয়াস। তবু পিছু ফিরছেন না তিনি। আচমকা একটা বুলেট এসে লাগে জ্যোতির মাথায়। জগৎজ্যোতি শেষবারের মতো চিৎকার করে বলেন ‘আমি যাইগ্যা’।
বঞ্চনার শুরু যুদ্ধের পরই
জগৎজ্যোতি দাসকে নিয়ে ‘সিলেটের যুদ্ধকথা’ বইয়ে তাজুল মোহাম্মদ লিখেছেন, ‘সে সময় (শহিদ হওয়ার পর) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, জগৎজ্যোতি দাসকে সর্বোচ্চ খেতাব প্রদান করা হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর তার বাস্তবায়ন হয়নি।’
মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ‘একাত্তরের দিরাই-শাল্লা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘জগৎজ্যোতির প্রতি বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ... সর্বোচ্চ খেতাব মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশেষ অংশের জন্য সীমাবদ্ধ রয়ে গেল। সরাসরি সশস্ত্র বাহিনীর না হলে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়া যাবে না। অতএব জগৎজ্যোতিও বাদ। ওতে কিছু যায় আসেনি। জ্যোতিরও কোনো ক্ষতি হয়নি। স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী জগৎজ্যোতিরা অমর। তাদের কীর্তি অক্ষয় অবিস্মরণীয়।’
মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীকে ১৯৭২ সালে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব প্রদান করা হলে তিনি তা বর্জন করেন। ২৩তম স্বাধীনতা দিবসের আগে আবার তা দিতে চাইলে আবারও বর্জন করেন সাদী।
এ প্রসঙ্গে দৈনিক আজকের কাগজে এক সাক্ষাৎকারে সাদী বলেন, ‘আমি নিজে অন্তত তিন জনকে জানি, যাদের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাওয়া উচিত ছিল। এদের এক জন জগৎজ্যোতি। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসী বীরত্ব প্রদর্শন করেও যারা যথাযথ মূল্যায়ন ও খেতাব পাননি তাদের আত্মার প্রতি সম্মান দেখাতেই আমি খেতাব ও সম্মান বর্জন করেছি।’
স্বাধীনতার পর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নাম জগৎজ্যোতিগঞ্জ করার প্রস্তাব দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জের পৌর পাঠাগারের নাম রাখা হয় জগৎজ্যোতি পৌর পাঠাগার নামে। তবে জগৎজ্যোতির নিজ জেলা হবিগঞ্জে জগৎজ্যোতির স্মৃতিরক্ষায় নেই তেমন কোনো উদ্যোগ।
দেশ মিলেছে, দিন ফেরেনি
জলসুখা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ জগৎজ্যোতির বাল্যবন্ধু। তিনি নিজেও দাস পার্টির সদস্য ছিলেন।
তিনি জানান, গ্রামেও জগৎজ্যোতির কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিরক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই।
জগৎজ্যোতিদের প্রাণের বিনিময়ে মানচিত্র আর লাল সবুজের পতাকার মালিকানা মিললেও দিন ফিরেনি তাদের পরিবারের। এখনও দরিদ্র্যই সঙ্গী তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগৎজ্যোতির বাবা, মা ও ভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। আছেন বৌদি, বোন ও ভাতিজা। বৌদি ফনিবালা দাস নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জে মেয়ের বাড়িতে থাকেন। তার ছেলে দুলালচন্দ্র দাস হবিগঞ্জে এক দোকানে চাকরি করেন। আর জ্যোতির বোন থাকেন দিরাইয়ে স্বামীর বাড়িতে।
জগৎজ্যোতির ভাতিজা দুলালচন্দ্র দাস জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হবিগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় তাদের পরিবারের বসবাসের জন্য এক খণ্ড জমি দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
‘কিন্তু আজও সে জায়গা আমরা পাইনি’, আক্ষেপের সুরে বলেন জগৎজ্যোতির ভাতিজা।
জ্যোতির সহযোদ্ধা ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘জগৎজ্যোতিকে যে স্থানে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি একা চাইলে তো হবে না। সবাই মিলে চাইলে সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘তার (জগৎজ্যোতি) পরিবারের কেউ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান কি না, আমার জানা নেই।’
আজমিরীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা উত্তম কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জগৎজ্যোতির পরিবার এখানে থাকেন না। তারা কোথায় আছেন, তাও জানি না। তার পরিবারের কেউ মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও নেন না।’
তিনি জানান, জগৎজ্যোতির স্মৃতিরক্ষায় ভেড়ামোহনা নদীর পারে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আজমিরীগঞ্জে ‘বীর উত্তম জগৎজ্যোতি দাস’ নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: হাসান মোরশেদের দাস পার্টির খোঁজে এবং অপূর্ব শর্মার অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি