কারাবন্দিদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ মাস তিনেকের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে বন্দিদের সব তথ্য সংরক্ষণ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিউজবাংলাকে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে চাইলে এক ক্লিকেই জানা যাবে যে কোনো কারাবন্দির সব তথ্য। এর মধ্যে থাকবে কোন বন্দি কোন কারাগারে, তার অপরাধ, মামলার সংখ্যা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আদালতে হাজিরার তারিখ, কত দিন ও কত বার জেল খেটেছেন ইত্যাদি।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) অধীনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বায়োমেট্রিক তথ্য সংবলিত এ ডাটাবেজ তৈরি করছে। প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা করছে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের (ইউএনওডিসি)।
খুব শিগগিরই ডাটাবেজটি উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসমিরা জামিন নিয়ে ফেরারি হয়ে যান, অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। এই ডাটাবেজ তৈরির পর তা জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এতে জামিনে বেরিয়ে আসামি পালিয়ে যাওয়ার পথও বন্ধ হবে।
ডাটাবেজে বন্দির ছবি, বায়োমেট্রিক ছাপ, চোখের মনির স্ক্যান ও আগের অপরাধের রেকর্ডসহ সব তথ্য রাখা হবে। এতে বন্দির নিরাপদ আটকের বিষয়েও স্বচ্ছতা আসবে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা কারাগারে গেছেন, তাদের নজরদারিতে রাখাও সহজ হবে।
এ ছাড়া কোন কারাগার থেকে কত বন্দিকে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সঠিকভাবে তাদের কারাগারে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে কি না, তাও জানা যাবে এই তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক বন্দির আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি করছি। এতে ক্যাটাগরি অনুযায়ী কোন বন্দির জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন, তা বুঝে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। সেই সঙ্গে আসামি ধরার ক্ষেত্রে আর ভুল হবে না।’
তিনি জানান, দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। এরই মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫টি কারাগারে থাকা বন্দিদের তথ্য ডাটাবেজে যুক্ত করার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত শেষ হবে।
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, শুধু দাগি অপরাধী কিংবা দীর্ঘদিন কারাবন্দি নন, এক দিনের জন্য কারাগারে গেছেন এমন ব্যক্তির তথ্যও থাকবে ডাটাবেজটিতে।
এ প্রসঙ্গে এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আরও বলেন, ‘মানুষ জেলে গেলেই অপরাধী হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিচারের মাধ্যমে কেউ অপরাধী হিসেবে স্বীকৃত না হবে, ততক্ষণ কিন্তু সে অপরাধী নয়।
‘তাই এ ডাটাবেজে নাম থাকা মানেই ওই ব্যক্তি অপরাধী নন। অনেক দেশেই প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেসব মানুষকে আটক বা গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় তাদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়।’
জিয়াউল আহসান আরও বলেন, ‘ডাটাবেজের কাজ চলছে। আশা করছি, তিন মাসের মধ্যেই শেষ হবে।’
২০১৯ সালের জুন থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ ও গাজীপুর জেলা কারাগারকে পাইলট প্রকল্প ধরে এই তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ শুরু হয়। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরকেই ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই কারাবন্দিদের এই ডাটাবেজ হচ্ছে।
এর মাধ্যমে একটি ভালো ফল আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তার কিছুদিন পর ডাটাবেজ তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় র্যাবকে, যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে এনটিএমসি।
এর আগে ২০১৬ সালেই নিজস্ব উদ্যোগে অপরাধীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘র্যাব-প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল র্যাব। নানা জটিলতায় আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি।