আইনজীবী তালিকাভুক্তির জন্য বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা চলার সময় অরাজকতার মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ। তিনি নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে অরাজকতার দায়ে ঘটনাস্থল থেকেই তাজকে আটক করা হয়। মামলা হওয়ার পর রোববার তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’
ওসি বলেন, এই ঘটনার মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে দুইশ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে প্রথমেই তাজের নাম রয়েছে।
তারেক উদ্দিন তাজকে আদালত রিমান্ড দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, রোববার এই মামলায় পাঁচ জনকে রিমান্ডে নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সব আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হবে।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন তাজ। এরপর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
১১ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুরের একটি রেস্টুরেন্টে পাখির মাংস দিয়ে তাজের ভূরিভোজ করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর আগে ২০১৩ সালে সিলেটে বাংলাদেশের কামিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর সভাপতি মজুাহিদুল ইসলাম সেলিমের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের একটি অংশ। এই মামলার আসামি ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারেক উদ্দিন তাজ। তাজ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিচালক (মিডিয়া, প্রশাসন ও জনসংযোগ) হিসেবে কর্মরত। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এবারের বার কাউন্সিলের পরীক্ষার একজন পরীক্ষার্থী ছিলেন তাজ।সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শহীদ উল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘তারেক উদ্দিন তাজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছে। তবে উনি (তাজ) গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই প্রথম শুনলাম। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। এর আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’প্রশ্নপত্র ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘কঠিন’ হয়েছে এমন অজুহাতে শনিবার ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অনেক পরীক্ষার্থীর খাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়। সেইসঙ্গে শিক্ষক ও পরীক্ষা পরিদর্শকদের লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে।রাজধানীর মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ছিলেন সিলেটের দেবব্রত ঘোষ চৌধুরী। ওই দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ কেন্দ্রের বাইরে হট্টগোল শুনতে পাই। তখন পরীক্ষা পরিদর্শকরা আমাদের আশ্বস্ত করেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে হট্টগোলকারীরা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের উত্তরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে করোনার ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু উশৃঙ্খল যুবকের কারণে আমিসহ অনেকের ভবিষ্যতই এখন হুমকির মুখে পড়েছে।’মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ ও সূত্রাপুর থানার মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে কিছু পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে অনীহা জানায়। পরে তারা পরীক্ষা দিতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের বাধা দেয় এবং কেন্দ্রের বাইরে এসে বিক্ষোভ করে।২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অ্যাডভোকেটশিপ প্রার্থীদের এই লিখিত পরীক্ষা করোনা মহামারির কারণে পেছানো হয়।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল।এ বছর রাজধানীর নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৩ হাজার প্রার্থীর জন্য পরীক্ষার আয়োজন করে বার কাউন্সিল। এর আগে প্রার্থীদের একাংশ লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যাডভোকেটশিপ পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছিল।