নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪২ বিশিষ্টজনের চিঠির জবাবে একজন কমিশনার বলেছেন, এদের অনেকেই তাদের কাছ থেকে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। না পেয়ে এখন নানা অভিযোগ তুলছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় এই বিশিষ্টজনরা ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন। পাশাপাশি চিঠি দেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
চিঠিতে আর্থিক অসদাচরণ, কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, নিয়মবহির্ভূত বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহার, ইভিএম ক্রয়ে অনিয়ম, অংশীজনের মতামত উপেক্ষা, নির্বাচনি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া, রিটার্নিং কর্মকর্তা সাক্ষরিত ফলাফলের সঙ্গে কেন্দ্রের ফলাফলের অমিলসহ নানা অভিযোগ আনা হয়।
পরদিন বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমার বিবেচনায় (বিশিষ্টজনদের মধ্যে) যারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আছেন, তারা এই নির্বাচন কমিশনে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। সেই ব্যবসার সুযোগ হয়ত এই নির্বাচন কমিশনের আমলে হয়নি। তাই তারা ক্ষুব্ধ হতেই পারেন।’
বিশিষ্টজনদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাওয়ার অভিযোগ তুললেও কারা কী ধরনের ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি শাহাদাত। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তারা বিশিষ্টজন। তাদের মতো করে বলেছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে যেহেতু চিঠি দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি দেখবেন। তবে আমি আমার বক্তব্য শালীনতা বজায় রাখতে চাই।
‘কেবল এটা বলতে চাই হয়ত এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর কোনো ভিত্তি আছে বলেও আমি মনে করছি না।’
বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা অবশ্য কিছু বলতে চাননি। বিকালে কমিশন থেকে বের হওয়ার সময় এক প্রশ্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রপতির কাছে পেন্ডিং, এটা নিয়ে কথা বলবো না।’
তবে বিশিষ্টজনদের অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট নয় বলে মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন। বলেন, ‘প্রথমত আমি মনে করি, তারা দুই একটি পত্রিকা ও টেলিভিশনের পরিবেশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই বক্তব্য দিয়েছেন। বিশেষ করে নিয়োগ ও গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে।
‘আমরা কিন্তু ওইসব পত্রিকা ও টেলিভিশনে কিন্তু রিজয়েন্ডারও (প্রতিবাদ) দিয়েছিলাম। আমি জানি না এটা তাদের গোচোরিভূত হয়েছে কি না।’
শাহাদাত বলেন, ‘এমনিতেই আমরা শপথ নেয়ার তিন বছর পর গাড়ি পেয়েছি। আর যে লাক্সারিয়াস গাড়ির কথা উনারা বলেছেন, তার কোন ভিত্তি আছে কি না আমি জানিনা। কারণ, এ গাড়ি বর্তমানে ইউএনওরা (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ব্যবহার করছেন। আর আমাদের বাড়তি গাড়ি ব্যবহারের কোনো বাস্তবতা আমারও নেই, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার সহকর্মীদেরও নেই।
‘সবচেয়ে যে বিষয়টা পীড়াদায়ক, সেটা হলো ওনারা আমাদের অভিযুক্তও করে ফেললেন, একইসঙ্গে ওনারা মহামন্য রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগও করে ফেললেন। কেবল সেটা নয়, আমাদের কি করণীয় বা আমাদের কী দণ্ড, সেটাও এক অর্থে দিয়ে দিলেন! সেটা কতোখানি বিবেচনাপ্রসূত বা সেটা শিষ্টাচারবর্জিত কি না, আমার মনে হয় সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে।‘
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের অভিযোগের শেষ নেই। ভোট নিরপেক্ষ করার বদলে কমিশন সরকারের হয়ে কাজ করে, এমন অভিযোগ হরহামেশা করে থাকের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের দাবি, সরকার সমর্থক ছাড়া অন্যদের ভোট দিতে দেয়া হয় না। ইভিএম আসার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ইভিএমে ভোটাররা তাদের পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর ভোট দেয় সরকার সমর্থকরা।
তবে নির্বাচন কমিশন শাহাদাত দাবি করেছেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট চেষ্টা করছে বর্তমানের নির্বাচনগুলো যথেষ্ট অবাধ, সুষ্ঠুও নিরপেক্ষ করার জন্য। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনের যতোটা করা জরুরি নির্বাচন কমিশন ততটুকই চেষ্টা করছে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য।’
আগের দিন ভার্চুয়াল এ সংবাদ সম্মেলনে, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ, আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন ৪২ বিশিষ্ট ব্যক্তি। রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবেও এ দাবি জানানো হয়।
৪২ বিশিষ্টজনের মধ্যে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, আকবর আলি খান ও সুলতানা কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, কামাল হোসেনের স্ত্রী হামিদা হোসেন, কামাল হোসেনের মেয়ে সারা হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম ও আহসান এইচ মনসুর, এনজিও কর্মী বদিউল আলম মজুমদার, রাশেদা কে চৌধুরী, খুশী কবীর, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইনজীবী শাদহীন মালিক, বামপন্থি রাজনীতিক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আলোকচিত্রি শহীদুল আলম।