নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল নয়নাভিরাম ভাস্কর্য ‘ঐতিহ্য নারায়ণগঞ্জ’। ভাস্কর্যটিতে তুলে ধরা হয় জেলার সভ্যতা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস।
তরুণ প্রজন্মের কাছে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে নির্মিত ভাস্কর্যটি এখন বন্দি কাঁটাতারের বেড়াজালে। আটকে দেয়া হয়েছে ভাস্কর্যের ফটকসহ প্রবেশপথের দুই পাশ। প্রবেশপথে কাঁটাতার দেখে ফিরে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলার যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ভাস্কর্যটির প্রধান শিল্পী নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র নৃপল খান। ২০১৬ সালের ২৩ জুন উদ্বোধনের পর ভাস্কর্যটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান মিঞা।
৬৫ বর্গফুটের ভাস্কর্যটিতে তুলে ধরা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসহ একাত্তরের উত্তাল সময়ের নানা চিত্র। রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পানাম নগরী, ঈশা খাঁর সর্দার বাড়ি, প্রাচীন মোগল স্থাপত্য, হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যস্থান লাঙ্গলবন্দ, রূপগঞ্জের জামদানি শাড়ি, আদমজী জুটমিলসহ নারায়ণগঞ্জের এক টুকরো ইতিহাস।
ভাস্কর্যটির মাঝেই রয়েছে একটি নৌকা। রাতে নৌকাটির পাল থেকে রঙিন পানির ঝরনা এর নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিত অনেক গুণ।
দ্বীন ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, এখানে নারায়ণগঞ্জসহ ইতিহাসের অনেক কিছুই তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভাস্কর্যটি। প্রশাসনের উচিত ভাস্কর্যটি জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করা।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা বলেন, রক্ষণাবেক্ষণ না করে ভাস্কর্যের সব পাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উচিত ভাস্কর্যটি রক্ষণাবেক্ষণ করা।
ভাস্কর্য নির্মাণের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের সাবেক নাজির আবুল হোসেন সিকদার জানান, সাবেক ডিসি আনিসুর রহমান মিঞা প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যটি বানিয়েছিলেন। তিনি বদলি হওয়ার পর আসা অন্য ডিসিরা আর ভাস্কর্যটি নিয়ে তেমন উদ্যোগ নেননি।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান ডিসি জসিমউদ্দিন আসার পর ২০১৯ সালের দিকে ভাস্কর্যটির চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জসিমউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাস্কর্য এলাকায় প্রবেশপথগুলোর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দিকটি কাঁটাতার দিয়ে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই স্থানে নতুন গেট করা হবে। এজন্য ১০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জে বদলি হওয়ার আগে থেকেই ভাস্কর্যের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। বিষয়টি পর্যালোচনা করে কাঁটাতার সরানোর ব্যবস্থা হবে। ভাস্কর্যের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাও মেরামত করা হবে।