বাংলাদেশ একদিন যুদ্ধবিমান নিজেরাই বানাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে যশোরে বিমানবাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আশা প্রকাশ করেন তিনি।
‘সম্প্রতি আমরা চালু করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। এটা লালমনিরহাটে আমরা স্থাপন করছি। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিমান চলাচল, নির্মাণ, গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা করবে’, বলেন সরকারপ্রধান।
‘আমি আশা করি এর মাধ্যমে হয়তো একদিন আমরা এ বাংলাদেশে যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার তৈরিও করতে পারব। আর তা ছাড়া মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা করা। হয়তো একদিন আমরা মহাকাশে পৌঁছেও যেতে পারি। সে প্রচেষ্টাও আমাদের থাকবে’, যোগ করেন তিনি।
বিমান বাহিনীকে আধুনিক ও যুগপোযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিমানবাহিনীকে আধুনিক করতে পাঁচটি সি-১৩০জে বিমান ক্রয়ে চুক্তি হয়েছে, যার তিনটি এরই মধ্যে এসে পৌঁছেছে। বৈমানিকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণে সাতটি অত্যাধুনিক কেএইট ডব্লিউ জেড ট্রেইনার বিমান সংযোজন করা হয়েছে এবং অচিরেই যুক্ত হচ্ছে পিটি সিক্স সিমুলেটর।
‘এ ছাড়াও শিগগিরই যুক্ত হবে এয়ারডিফেন্স এন্টিগ্রেশন, মোবাইল গ্যাপ ফিলার রাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স রাডার।’
বাহিনীর লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়নে বিমানবাহিনীতে আরও আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সে পরিকল্পনায় ছেদ পড়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা এখন অত ব্যয় করতে পারছি না। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে আমাদের বিমানবাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমানবাহিনীর জন্য হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও এয়ারম্যান ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের কাঠামো এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
এ সময় বিমানবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, একটি জাতি। এ কথা সব সময় মাথায় রেখে, মনে সাহস রেখে, মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলতে হবে এবং নিজেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।’
‘কোনো দিক দিয়েই বাংলাদেশ যেন কোনো কিছুতেই পিছিয়ে না থাকে, এটা মাথায় রেখেই যা করা দরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা আমরা সেটা করে যাচ্ছি। কাজেই সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, দেশের মানুষের কল্যাণ করা, সার্বিক উন্নতি করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই।’
‘নিজেদের এমনভাবে গড়ে তুলবে যেন আমাদের এই বাংলাদেশ, তোমাদের মতো তরুণদের কাছে যে প্রত্যাশা করে তা যেন তোমরা পূরণ করতে পারো। নবীনদের প্রতি জাতির পিতার নির্দেশনা, দেশাত্মবোধ, দায়িত্ববোধ এটা থাকতে হবে। সেই সাথে আত্মবিশ্বাসও থাকতে হবে।’
করোনার সময় বিমানবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আপনারা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিয়ে এসেছেন বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম। মানবিক সাহায্যসহ বিমানবাহিনী বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে পৌঁছে গেছে মালদ্বীপ, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে।’
‘করোনা প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত এনেছেন। করোনায় অসুস্থ রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসা বা তাদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সেটাও বিমানবাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করেছে।’
পরিবেশের উন্নয়নে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সহায়তায় বনবিভাগের নিঝুম দ্বীপ ও ডোমার চরে ভবিষ্যতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উন্নতমানের গাছের বীজ বপনের মাধ্যমে যে সবুজ বিপ্লব সূচিত হতে যাচ্ছে তা দেশের প্রকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’
এছাড়াও বিভিন্ন উদ্ধার অভিযানে বিমানবাহিনীর ভূমিকাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘হিমছড়িতে আটকে পড়া কয়েকজন ছাত্রকে বিমানবাহিনী উদ্ধার করেছে। তারা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে যে হেলিকপ্টার না নেমেও তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে।’
করোনার কারণে অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত থাকতে না পেরে দুঃখও প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনার কারণে আমার যাতায়াত সীমিত থাকায় উপস্থিত থাকতে পারলাম না। তবুও প্যারেডটা হচ্ছে এ জন্য আমি আনন্দিত।’