সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় শীত নামে আগে। ঠান্ডার তীব্রতাও থাকে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি।
এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শীতের শুরুতেই হিমেল হাওয়া আর ঘন কুঁয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। প্রতিদিনই নামছে তাপমাত্রার পারদ।
শনিবার জেলাটিতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এটিই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে।
তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং টানা এক সপ্তাহের শৈত্যপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ জেলার মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী।
কাজের জন্য অপেক্ষা। ছবি: নিউজবাংলাপ্রচন্ড ঠান্ডায় শ্রমিক, রিক্সাচালক, দিনমুজুরসহ শ্রমজীবী মানুষ কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
সোনাহাট স্থলবন্দরের পাথর ভাঙা শ্রমিক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় তাদের হাত-পা যেন জমে যায়। সকাল সকাল কাজে যোগ দিতে পারেন না। বেশি শীতে তেমন কাজ জোটে না। যেটুকু জোটে, সেটিরও মজুরি কম।
কৃষি শ্রমিক আবুল হোসেনও বলেন, অন্য সময় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা কাজ করে চার থেকে পাঁচশ টাকা পাওয়া যেত। এখন শীতের কারণে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারছেন না। এতে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকার মজুরি মেলে। শুধু চাল-ডাল কিনতেই সেই টাকা শেষ হয়ে যায়।
ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়েছে কৃষি জমিতেও। আলোর প্রখরতা না থাকায় ইরি ও বোরো বীজতলায় এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে লালচে-হলদে ভাব। শীতের সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। নদ-নদীর পাশের এসব বসতিতে হিমেল বাতাসের দাপট। ঠান্ডায় এরই মধ্যে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়া, হাঁপানি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে।
কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার মধ্যেই কাজে যাচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: নিউজবাংলাকুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নবিউর রহমান জানান, শীতজনিত রোগ বাড়লেও এখনও কোনো প্রাণহানি হয়নি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলার ৯ উপজেলায় ৩৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেগুলো মাঠ পর্যায়ে বিতরণও করা হয়েছে। এ ছাড়া শীতবস্ত্র কেনার জন্য প্রতি উপজেলায় ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।