বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য: মসজিদ নিয়ে চরমোনাই পীরের অসত্য দাবি

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৪১

চরমোনাইয়ের পীর রেজাউল করীমের দাবি, দুটি মসজিদের অবকাঠামো ভেঙে সেখানে ভাস্কর্যটি স্থাপনের কারণে তারা বিরোধিতা করেছিলেন। তবে ধোলাইপাড় মোড়ের বায়তুস শারাফ মসজিদের মোতোয়াল্লি জানিয়েছেন, রাস্তা সম্প্রসারণের সময় সরকারি জমিতে থাকা তাদের অংশবিশেষ ভাঙতে হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী দৃষ্টিনন্দন আরেকটি মসজিদ তৈরি করে দিয়েছে।

ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে সবার আগে সোচ্চার হওয়া ইসলামী আন্দোলন মসজিদ ভাঙা নিয়ে যে অভিযোগটি করেছে, সেটির কোনো সত্যতা মেলেনি।

এই দলটির নেতা চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীমের দাবি, দুটি মসজিদের অবকাঠামো ভেঙে সেখানে ভাস্কর্যটি স্থাপনের কারণে তারা বিরোধিতা করেছিলেন।

তবে এই দাবির কোনো সত্যতা মেলেনি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে গত এক মাস ধরে নিরুত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম।

এটি নির্মাণ না করার দাবিতে প্রথমে গত ১৩ নভেম্বর ধূপখোলা মাঠে সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। এর নেতৃত্ব দেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম, যিনি চরমোনাইয়ের পীরের ছোট ভাই। ওই সমাবেশে বলা হয়, তারা এক নম্বর সংকেত দিয়েছেন। দাবি মানা না হলে দেয়া হবে ১০ নম্বর সংকেত।

শুরুতে সরকারপন্থিরা চুপচাপ থাকলেও পরে তারা মাঠে নামায় পাল্টে যায় পরিস্থিতি। আগে উত্তেজিত বক্তব্য দিতে থাকা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর সুর নরম হয়।

এর মধ্যে আবার ৪ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে ভাঙচুর করা হয় কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীর ভাস্কর্য। আর মামলা হয় ইসলামী আন্দোলনের নেতা ফয়জুল করীম এবং হেফাজত নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হকের বিরুদ্ধে।

এ মামলার পরপর গত ৮ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে আসেন চরমোনাইয়ের পীর। তিনি ভাস্কর্যবিরোধিতার কারণ তুলে ধরে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন, ‘৫-৭টি মসজিদ মাদ্রাসার মিলন মোহনায়, দুটি মসজিদের অবকাঠামো ভেঙে এই পয়েন্টে ভাস্কর্য স্থাপনের ফলে স্থানীয় ইমাম মুসল্লি ও তৌহিদি জনতা সেখানে ভাস্কর্যের বদলে বিকল্প কোনো উত্তম পন্থায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার দাবি জানিয়েছিল।’

তবে মসজিদ ভেঙে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে, এই তথ্যের কোনো সত্যতা নেই।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুতে নির্বিঘ্নে যেতে যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সম্প্রসারণের জন্য সরকার যেসব জায়গা অধিগ্রহণ করে, সেখানে একটি মসজিদ ছিল। ধোলাইপাড় মোড়ে এই মসজিদটির নাম ছিল বায়তুস শারাফ।

এটি ভাঙা হলেও পাশেই আরেকটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ তৈরি করে দিয়েছে সেনাবাহিনী, যেটি এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্প থেকেই করা হয়েছে।

ধোলাইপাড় মোড়ের পূর্ব পাশে ছিল মসজিদটির অবস্থান। মসজিদের মোতোয়াল্লি মকবুল হোসেন সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মসজিদের কিছু অংশ আমাদের পারিবারিক জায়গায় আর কিছুটা সরকারি জায়গায় ছিল। রাস্তা বাড়ানোর সময় সেনাবাহিনীর লোকজন আমাদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছে।

‘আমরা সে অনুযায়ী মসজিদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছি। এরপর সেনাবাহিনী নিজ দায়িত্বে ভেঙে আবার মসজিদ করে দিয়েছে।’

চরমোনাই পীরের দাবি, মসজিদটি ভাঙায় এলাকায় উত্তেজনা ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদের মোতোয়াল্লি বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ বা মতবিরোধ ছিল না। কারণ মসজিদটি ছিল সরকারি জায়গায়, কিছুটা আমাদের পারিবারিক জমিতে।

‘রাস্তা সম্প্রসারণ করা হবে। সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। কারণ এতে সবারই উপকার হবে।’

গত ২০ বছর ধরে ধোলাইপাড় মোড়ে ডাবের ব্যবসা করছেন রাজ্জাক মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগে আমার দোকান ছিল আরও অনেক সামনে। রাস্তা বাড়ানোর সময় আশপাশের অনেক কিছু ভাঙা পড়ছে। বায়তুস শারাফ মসজিদ ছাড়া আর কোনো মসজিদ ভাঙা পড়েনি। আর এই মসজিদ ভাঙা হইছে ঠিক আছে। কিন্তু আবার নতুন করে করেও দিছে সরকার। তবে এখনও নামাজ পড়া শুরু হয়নি।’

‘তাহলে দুটি মসজিদের অবকাঠামো ভাঙার তথ্য কোথায় পেলেন চরমোনাইয়ের পীর?’

জবাবে ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম কথা ঘোরান।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা অবকাঠামো ভাঙার কথা বলেছি। মসজিদ থেকে বের হলেই ভাস্কর্য দেখা যাবে। সে জন্য আমরা বিকল্প করার কথা বলেছি।’

গত ১৩ নভেম্বরের ওই সমাবেশ স্থানীয়দের দাবির কারণে হয়েছে বলে ইসলামী আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ইস্যুতে স্থানীয়রা আবেদন করেছিল। কিন্তু কাজ না হওয়ায় আমাদের কাছে আসে। এরপর আমরা প্রতিবাদ জানাই।’

তবে বায়তুস শারাফ মসজিদের মোতোয়াল্লি মকবুল হোসেন সরদার বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা কথা। মসজিদ ভাঙার পর এটা নিয়ে কেউ কথা বলেনি। অনেকে রাজনীতি করার জন্য মিথ্যাচার করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর