বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই অকুতোভয় বাঘা যতীন

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০৫

কয়া মহাবিদ্যালয় চত্বরে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর নির্মিত হয় তার একটি ভাস্কর্য। বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে ভাস্কর্যটির নাক ও মুখের একটি অংশ ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পরে বাংলায় ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ ও অরবিন্দ ঘোষের মতবাদে প্রভাবিত হয়ে বাংলা ও উত্তর ভারতে কয়েকটি সংগঠন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী লড়াইয়ের পথ বেছে নেয়।

বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ শুরু হওয়ার আগে থেকেই মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির জন্য গ্রাম ও শহর এলাকায় কয়েকটি যুব সংগঠন গঠিত হয়।

এদের মধ্যে অন্যতম ছিল যুগান্তর দল। বাংলায় এই দলের প্রধান নেতা ছিলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তবে ‘বাঘা যতীন’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। কথিত আছে, কৈশোরে একাই ছুরি হাতে বাঘ হত্যা করায় তার এই নামকরণ হয়।

বাঘা যতীনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামের মামা বাড়িতে। বর্তমানে গ্রামটি কুমারখালি উপজেলায় পড়েছে। তার পৈতৃক নিবাস ছিল ঝিনাইদহ জেলায়।

কয়া মহাবিদ্যালয় চত্বরে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর নির্মিত হয় তার একটি ভাস্কর্য। বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে ভাস্কর্যটির নাক ও মুখের একটি অংশ ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

কুষ্টিয়া যাদের নামে গর্ব করে, তাদের একজন এই বাঘা যতীন। স্বভাবতই এই ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা করছে এলাকাবাসী।

বাঘা যতীন অরবিন্দ ঘোষের মতবাদ দিয়ে প্রভাবিত ছিলেন। ১৯০৮ সালে যতীনসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে আটক করে ব্রিটিশ সরকার। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ছাড়া পান তিনি। এরপরে আত্মগোপন করে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকেন যতীন।

কিছুদিন পরে যতীনকে আবারও হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আরও যারা গ্রেফতার হন, তাদের ‘যতীন গ্যাং’ নামে অভিহিত করা হয়। অত্যাচারের শিকার হয়ে এদের কয়েকজন মারা যান এবং অন্য কয়েকজন পাগল হয়ে যান।

জেলে থাকা অবস্থায় যতীন এবং নরেন (মানবেন্দ্রনাথ রায়) সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারা এ উদ্দেশ্যে ভারত ভ্রমণ করে বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকার বিপ্লবীদের সংগঠিত করেন। বিভিন্ন দলের নেতারা হুগলি এবং মেদিনীপুরের একত্রিত হয়ে বাঘা যতীন মুখোপাধ্যায় ও রাসবিহারী বসুকে যথাক্রমে বাংলা এবং উত্তর ভারতের নেতা মনোনীত করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেন বাঘা যতীন। তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন।

ভারতবর্ষের বাইরেও বিপ্লবীদের সংগঠিত করার চেষ্টা নেয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় বিপ্লবীরা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি গঠনের উদ্দেশ্যে বার্লিনে সমবেত হন। তারা জার্মানির সাহায্য চাইলে জার্মান সরকার এতে সম্মত হয়।

যতীনকে বিপ্লবী দলের কমান্ডার-ইন-চিফ করা হয়। তাকে উড়িষ্যায় গোপন আস্তানায় রেখে এম এন রায় বাটাভিয়া যান। সেখানে জার্মান সরকারের সঙ্গে জাহাজে অস্ত্র প্রেরণ ও অর্থনৈতিক সাহায্য বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।

পরে ব্রিটিশ পুলিশ যতীনের গোপন আস্তানার সন্ধান পায়।

১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক গুলি বিনিময়ের পর দুজন বিপ্লবী আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ আহত অন্য দুজনের সঙ্গে যতীনের মরদেহ উদ্ধার করে।

চট্টগ্রামের ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনও যুগান্তর দলের সদস্য ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে জনমত গঠন ও সহায়তা সংগ্রহে অংশ নেন বাঘা যতীনের নাতি পৃথীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় তাকে খেতাব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

(প্রতিবেদন তৈরিতে আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ও বাংলাপিডিয়ার সহায়তা নেয়া হয়েছে)

এবার ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর

এ বিভাগের আরো খবর