রাজধানীর গুলশান, ভাটারা ও ভাষানটেকে অভিযান চালিয়ে ৮৫ লাখ টাকাসহ একটি প্রতারক চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শহিদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান (৫২), মোহাম্মদ আলী (৫৯), সুমন আহমেদ (৩৩), তোফায়েল হোসেন রতন (৬০) ও এম আজাদ (৪৮)।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রতারিতদের মামলা ধরে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও তদন্ত করে। গত সোমবার তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান, ভাটারা ও ভাষানটেক থানা এলাকার পৃথক তিনটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, তারা সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা প্রতারণা করার জন্য প্রথমেই ছদ্মনাম ধারণ করে দামি পোশাক ও চালচলন দেখিয়ে অভিজাত এলাকায় বাসা-বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেখতে দামি আসবাবপত্র দিয়ে অফিস সাজান। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় সুনির্দিষ্ট লোককে টাগের্ট করেন।
রাজধানীর গুলশান, ভাটারা ও ভাষানটেকে অভিযান চালিয়ে ৮৫ লাখ টাকাসহ প্রতারক চক্রকে আটক করে ডিবি।
‘এক্ষেত্রে তারা পেশাজীবী মানুষ, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অথবা কোনো বড় ব্যবসায়ীকে টার্গেট করেন, যারা প্রতিনিয়ত টাকা- পয়সা লেনদেন করেন। অনেক সময় তারা বাসা-বাড়ি ভাড়া নেয়ার নাম করে যান। অথবা বড় ধরনের ব্যবসার কথা বলে তাতে বিনিয়োগ করার জন্য লোকজনকে আমন্ত্রণ জানান।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘টাগের্টকৃত লোকদের প্রথমে তাদের ভাড়া করা অফিসে দাওয়াত দেন তারা। একপর্যায়ে নানা ধরনের ছলচাতুরির মাধ্যমে তাদের বিমোহিত করেন। প্রতারকদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশি বড় ব্যবসায়ী সাজেন, যাদের বিহারি বা ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে থাকেন।
‘এক্ষেত্রে রাচি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের নাম বলেন। তারা অনেক সময় বলে থাকেন, জাপান-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চারে বড় কোনো ব্যবসা করবেন। এই ধরনের প্রলোভনে পা ফেলে অনেক সময় কেউ কেউ সর্বস্ব হারান। প্রতারকরা টাকা নেয়ার পরপরই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং অফিস বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান।’
তিনি জানান, ডিবির গুলশান বিভাগ ইতিমধ্যে আটটির বেশি অফিস চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা চালায়। কিছুদিন আগে একাধিক গ্রুপকে গ্রেফতারও করে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিত্তবান ব্যবসায়ী ও সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের টাগের্ট করে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের নামে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।’
তিনি জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৮৫ লাখ টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি ব্রিফকেস, ফাইল ও এক হাজার টাকার সদৃশ দুই বান্ডিল নোট উদ্ধার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় এবং ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভাটারা থানায় মামলা রয়েছে।