করোনাভাইরাস মহামারি কেটে গেলে প্রত্যেক উপজেলা থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এক হাজার জনকে চাকরি দিয়ে বিদেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
‘করোনা মহামারি কেটে গেলে দেশের ৪৯২টি উপজেলা থেকে এক হাজার করে ৪ লাখ ৯২ হাজার জনকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে সরকার।’
করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতির অনেকটা থমকে গেলেও ভাটা পড়েনি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে। তাদের ওপর ভর করেই দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বর মাসেও বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ১ হাজার ৯০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
রেমিট্যান্সের এই ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখায় সরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই করছে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তবে বর্তমান শ্রমবাজার ধরে রাখা ও নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং বাজার চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার।’
এ বিষয়ে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমও তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি জানান, সারাদেশে ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) ও ছয়টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলোজির (আইএমটি) চালু রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় ৪৭টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নিমার্ণ কাজ শেষ হয়েছে।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আরও ১০০টি টিটিসি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা প্রতি উপজেলা থেকে এক হাজার মানুষকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান, যারা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে, তাদের অনেকেই দেশে আটকা পড়ে। কিন্তু সম্পূর্ণ ডাটাবেজ না হওয়ায়, যারা আবার বিদেশে ফিরেছে তাদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আটকা পড়া সৌদি প্রবাসীদের ৮০ শতাংশই দেশটিতে ফিরে গেছে বলে দাবি তার।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েক দফা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, মালয়েশিয়ার নতুন মন্ত্রী হওয়ার পরে আমরা তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক একটি মিটিং করেছি, আমাদের দেশের শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই আমরা কাজ করব।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজারের বেশি দক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জর্ডান। ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে আরও শ্রমিক পাঠানো যাবে বলে জানান ইমরান আহমদ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের থেকে ১২ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক নেবে, যাদের অধিকাংশই নারী। জর্ডানের পোশাক কারখানা ক্লাসিক ফ্যাশন এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশের কর্মীদের মেধা, শ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠা জর্ডানে অধিক সংখ্যক কর্মী নিয়োগের মূল কারণ।
লেবাননে আটকে পড়া প্রবাসীদের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু লেবানন নয় সারা বিশ্বের আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। সরকার এ বিষয়ে খুব আন্তরিক। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা চলছে, আমরা আশা করি খুব শিগগিরই এর সমাধান আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনীরূছ সালেহীনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।