বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘টাকা পয়সা নয়, বাবা বদিকে চাই’

  •    
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৮:৫৬

নিউজবাংলা কথা বলেছে ইসহাকের আইনজীবী কফিল উদ্দিনের সঙ্গেও। তার ধারণা, ইসহাক যা বলেছেন, তা সত্য। তিনি বলেন, ‘ইসহাকের আচরণ ও চেহারা সব কিছু বদির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে সে বদির ছেলেই। এটাকে অস্বীকার করার কিছু নাই।’

কক্সবাজারের আলোচিত উখিয়া-টেকনাফ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে বাবা দাবি করে মামলা করা মো. ইসহাক বলেছেন, তার অর্থকড়ির প্রতি কোনো লোভ নেই। পেতে চান শুধু বাবার পরিচয়।

গত রোববার টেকনাফ আদালতে মামলা করে হুলুস্থুল ফেলে দেয়া ২৬ বছর বয়সী এই যুবক বলেছেন, পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক।

ইসহাকের দাবি, ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল তার মা সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বদির। বিয়ে পড়ান বদিদের আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে কর্মরত মৌলভী আবদু সালাম। সাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান মোহাম্মদ এখলাছ।

বিষয়টি নিয়ে এতদিন চুপ থাকা প্রসঙ্গে ইসহাক জানান, বদির রাজনৈতিক শত্রু ও সামাজিক অবস্থানসহ নানা সমীকরণের কারণে তিনি মায়ের কাছে সময় নেন।

ইসহাকের দাবি, বদির পরিবার এর সবই জানে। ‘বাবার’ সঙ্গে তার দেখাও হয়েছে একাধিকবার। মায়ের হাত ধরে অসংখ্যবার বদির কাছে গিয়েছেনও। বদি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছেন; মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করেছেন; লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ইসহাক থাকেন কক্সবাজার লিংরোড এলাকায়। পড়াশোনা করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজে। এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দেবেন। পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করেন। তার টাকাতেই চলে সংসার।

নিউজবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে পিতৃপরিচয় নিয়ে তার ভাবনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ইসহাক।

আর্থিক কষ্টে থাকলেও বদিকে উদ্দেশ করে ইসহাক বলেন, ‘আপনার ছেলে হিসেবে অনুরোধ করছি, আমি আপনার টাকা পয়সা সম্পত্তি কিছু চাই না। আমি শুধু আপনাকে চাই।’

‘আপনি আপনার ছেলে-মেয়েকে যেভাবে আদর স্নেহ দিয়ে পিতার পরিচয় দিচ্ছেন আমিও সেই অধিকার চাই।’

পিতৃপরিচয় পাওয়া ছাড়া আদালতে যাওয়ার আর কোনো উদ্দেশ্য নেই জানিয়ে ইসহাক বলেন, ‘আমি আদালতে গেছি সুষ্ঠু বিচারের আশায়। আমি আশা করি, বাবা আমাকে গ্রহণ করবেন। আমি বাবার সম্মানহানি করতে চাইনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে আমার বাবা আবদুর রহমান বদিকে বলতে চাই, আপনি সত্য বলতে কখনও মাথা নত করেন না। আপনি হয়তো কোনো চাপে পড়ে আমাকে অস্বীকার করছেন।’

নিউজবাংলা কথা বলেছে ইসহাকের আইনজীবী কফিল উদ্দিনের সঙ্গেও। তার ধারণা, ইসহাক যা বলেছেন, তা সত্য। তিনি বলেন, ‘ইসহাকের আচরণ ও চেহারা সব কিছু বদির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে সে বদির ছেলেই। এটাকে অস্বীকার করার কিছু নাই।’

গত রোববার টেকনাফ আদালতে মামলা করার পর বদিকে এক সপ্তাহ সময় দিয়ে তার প্রতি সমন জারি করেছেন বিচারক।

আবদুর রহমান বদিকে বাবা দাবি করা মো. ইসহাক। ছবি: নিউজবাংলা

ছোট বেলায় অনেকবার বদির সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়ে মো. ইসহাক বলেন, ‘এক জন মা-ই জানেন কে তার সন্তানের বাবা। আমার মা সুফিয়া খাতুন বাবা হিসেবে সব সময় আবদুর রহমান বদির কথা বলেন।

‘আমি ছোটোবেলা থেকে তার সঙ্গে অনেক বার কথা বলেছি, দেখা করেছি। তার সঙ্গে মিশে আমি উপলব্ধি করেছি তিনিই আমার বাবা।’

এই মামলার পর তুমুল আলোচনা হলেও বদি পুরোপুরি চুপ। তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না, গণমাধ্যমের ফোন এড়িয়ে চলছেন। তার পরিবারের সদস্যরাও কিছুই বলছেন না।

ইসহাক বলেন, ‘আবদুর রহমান বদি চেয়েছিলেন কোনোদিন যেন আমাদের সম্পর্ক প্রকাশিত না হয়। কিন্তু মা, আমার দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, আমাকে বাবার পরিচয় ফিরিয়ে দেয়া হোক।’

আদালতে আসার আগে বিষয়টি ঘরোয়াভাবে মিটমাটের অনেক চেষ্টা হয়েছিল বলেও জানান ইসহাক। বলেন, ‘স্বীকৃতি পেতে আমি বাবার সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেছি। তিনিও আমাকে নানা কৌশলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিতৃত্বের পরিচয়টা দিতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন। আমার মাও তাকে অনেকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা?’

তার দাবির সত্যতা প্রমাণে ডিএনএ পরীক্ষার ওপর আবার জোর দেন ইসহাক। বলেন, ‘আমি বাবার ধন সম্পদ চাই না। চাই তার স্বীকৃতি।’

নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়েছে ইসহাক বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মামলা তুলে নিতে ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে।’

ইসহাক বলেন, ‘উনি (বদি) এক জন বড় মাপের লোক। চাইলে যে কোন মুহূর্তে আমার মতো এক জন সাধারণ ছেলেকে গুম করে দিতে পারে। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা চাই। সরকার প্রধান যেন আমাকে বাবা ডাকার অধিকার ফিরিয়ে দেন।’

কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নানা ঘটনায় আলোচিত। ছবি: নিউজবাংলা

বদি নানা ঘটনায় বাংলাদেশে আলোচিত চরিত্র। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি কক্সবাজার-৪ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার বদলে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় তার স্ত্রী শাহিন চৌধুরী। তিনিই এখন ওই আসনের সংসদ সদস্য। তবে নেপথ্যে থেকে কাজ করেন বদি।

এই রাজনীতিক আলোচিত ইয়াবা পাচারের অভিযোগ নিয়ে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির প্রতিবেদনে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের কারবারে তার সম্পৃক্ততার তথ্য আছে বলে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন এসেছে একাধিকবার। তবে বদি বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর বদিকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হয়নি এখনও।

এ বিভাগের আরো খবর