ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি না দিয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপস্থিত করায় শিক্ষকদের আপত্তির মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির সভা স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত এ সভা শুরু হয়। এ সভায় ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষকদের আপত্তির মুখে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই সভা শেষ করে দিতে বাধ্য হন উপাচার্য।
গত ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ আব্দুল বারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং বৃহস্পতিবারের সভায়ও রেজিস্ট্রার এম এ বারী বৈঠকে উপস্থিত হন।
এ নিয়ে সভার শুরুতেই শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। এ পর্যায়ে সভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ অবস্থায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবাহন ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকটি স্থগিত ঘোষণা করেন।
ভূতত্ত্ব খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমরা উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম; রেজিস্ট্রার এম এ বারী কেন এ বৈঠকে উপস্থিত? যিনি সরকারের চোখে অপরাধী, যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। তার সাথে বৈঠক করে আমরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করতে পারি না।‘
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীকে অব্যাহতি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপাচার্যকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি অসহযোগিতামূলক অসদাচরণের অভিযোগ পেয়ে তাকে অব্যাহতির জন্য এই চিঠি দেয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়) নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এই অব্যাহতির কথা বলা হয়।
গত ১৩ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠিটি ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সাধারণ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) পাঠানো চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের উদ্দেশে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ২০১৫ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে ২০১৭ এর পরিবর্তিত নীতিমালা অনুযায়ী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নীতিমালা পরিবর্তন এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আব্দুল বারী তদন্ত কমিটিকে বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতা করেছেন; যা অসদাচরণের শামিল। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাকে রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাবির এক কর্মকর্তা অব্যাহতির এ চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে এখনই কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটি বলা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইনি কিছু বিষয় আছে। আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় দেখে তার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।