বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে উচ্ছেদ ঘিরে নাটকীয়তা

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:০১

উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মার্কেটের ৩৪ জন ব্যবসায়ীর করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ৩৪টি দোকান উচ্ছেদে স্থিতাবস্থা জারি করেন। বেলা তিনটা নাগাদ আদেশের সেই কাগজ অভিযান পরিচালনাকারীদের হাতে পৌঁছালে গোটা উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর পৌনে একটা। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের নকশা বহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঘটনাস্থলে শত শত উৎসুক জনতা ও ব্যবসায়ীদের ভিড়। সতর্ক অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এর মধ্যেই ডিএসসিসির এক কর্মচারীর দিকে তেড়ে গেলেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, মার্কেটের ভেতর অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানগুলোর বৈধতা দেওয়ার কথা বলে হানিফ হাওলাদার নামে ডিএসসিসির বাজার শাখার এই কর্মচারী তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

এক সপ্তাহ আগে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযানের সময়েও ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি একই ধরনের অভিযোগ এনেছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বাধা দিয়েছিলেন উচ্ছেদে।

বৃহস্পতিবার সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে উচ্ছেদের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে কোনো ধরনের বাধা না আসলেও অভিযানের আগে মানববন্ধন করে তারা তাদের অভিযোগের বিষয়টি জানিয়ে রাখেন।

বেলা ১২টার দিকে অভিযানের শুরুতেই মার্কেটের চারপাশে ফুটপাতে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো ভেঙে দেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। পরে ভবনের বাইরের নকশাবহির্ভূত অংশগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এর পর ভূতলে (বেজমেন্ট) গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় গড়ে তোলা দোকানগুলো ভাঙা হতে থাকে।

উচ্ছেদকে ঘিরে মার্কেট এলাকায় জোরদার করা হয় নিরাপত্তা। সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পাশাপাশি অংশ নেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ

এর মধ্যেই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মার্কেটের ৩৪ জন ব্যবসায়ীর করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ৩৪টি দোকান উচ্ছেদে স্থিতাবস্থা জারি করেন। বেলা তিনটা নাগাদ আদেশের সেই কাগজ অভিযান পরিচালনাকারীদের হাতে পৌঁছালে গোটা উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যায়।

মূল নকশার বাইরের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নোটিশ দিয়ে গত রোববার ওই সব দোকান উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিল ডিএসসিসি। ঘোষণা অনুসারে সোমবার এই অভিযান পরিচালনার কথা ছিল।

তবে সেই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে রোববারই উচ্চ আদালতে রিট করেন ৩৪ দোকানের মালিক। এরপর সিটি করপোরেশনে আবেদন করে উচ্ছেদের আগে সময় নেন তারা।

কিন্তু বৃহস্পতিবার আরেকটি নোটিস দিয়ে সিটি করপোরেশন জানায়, দুপুরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

একই দিন সকালে সম্পূরক আবেদন করে ডিএসসিসির নোটিশটি চ্যালেঞ্জ করলে আদালত তিন মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। মেয়রের নির্দেশেই এই উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীদের যত অভিযোগ

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান বৈধ করার আশ্বাস দিয়ে সাবেক মেয়রের সাঈদ খোকনের নাম ভাঙিয়ে যুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন দোকানিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে মালপত্র দোকান থেকে সরিয়ে নিতে থাকেন ব্যবসায়ীরা

আবার নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ভাঙিয়ে কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন সম্প্রতি দোকানির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। যারা মেয়রের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করেছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান দোকানিরা।

অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়োর্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন ওই মার্কেটের (সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট) ভেতর ঢুকি নাই। টাকা নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। বরং মেয়র সাহেবকে (ফজলে নূর তাপস) আমি বার বার ওখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে বলেছি।’

মার্কেটের ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাঈদ খোকন সাহেব আমাদের বৈধতা দিয়েছেন। আমাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে হস্তান্তর নামা ও বরাদ্দপত্র দেয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলার আগে আমরা সব কাগজ ডিএসসিসিতে জমা দিয়েছি। আমাদের কাছ থেকে এতদিন খাজনা নিয়েছে তারা।’

নিউজবাংলার কাছে আজিজুর রহমানের খাজনা জমা দেয়ার রশিদের একটি কপিও রয়েছে। সেখানে ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৪ মাসের খাজনা হিসেবে ৮২ হাজার ৮৮০ টাকা জমা দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে রশিদে ডিএসসিসির রাজস্ব কর্মকর্তার সই থাকলেও সিল নেই।

আরেক ব্যবসায়ী উজ্বল হোসেন বলেন, ‘আমি গত ১৯ বছর ধরে এই মার্কেটে ব্যবসা করছি। প্রথম দোকান কিনি ২০ লাখ টাকা দিয়ে। এরপর আবার ৭০ লাখ টাকা দিয়ে দুইটা দোকান কিনেছি। আমার সব টাকা এখানে লগ্নি করা করা। তিন বছর আগে জোর করে ছয় লাখ টাকা নেয় মালিক সমিতি। এরপর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সও দেয়া হয়।’

ব্যবসায়ীরা জানান, এর আগে তারা বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তারা টাকার বিনিময়ে দোকান বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলেও পরে সিটি করপোরেশন তাদের খাজনা ও ট্রেড লাইসেন্সের অনুমতি দেয়।

নকশা বহির্ভূত দোকানের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা

নকশা অনুসারে ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন এই বিপনীবিতানের চারতলা পর্যন্ত বৈধ। তবে অনুমতি ছাড়াই নির্মিত পঞ্চম তলা ও বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। এ ছাড়া নকশায় থাকা খোলা জায়গা, শৌচাগার ও সিঁড়িঘরসহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গাতেও গড়ে তোলা হয়েছে অনেক দোকানঘর।

গত সপ্তাহে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে সেখানকার নকশাবহির্ভূত দোকানের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানিয়েছিল ডিএসসিসি। তবে আজকের অভিযানের এ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

নকশা বহির্ভূত দোকানের সংখ্যা জানতে চাইলে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘এই বিপণিবিতানে ছয় শতাধিক নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে। তবে সংস্থার জরিপকারীদের মতে এই সংখ্যা ৭৫০টির মতো। আবার ব্যবসায়ী ও দোকানমালিকদের মতে এই সংখ্যা ৫৫৯ টি।’

উচ্ছেদের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু আদালত এ বিষয়ে একটা নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা পর্যালোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর