বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতের কাছে ট্রানজিট চাইল বাংলাদেশ

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:৫১

আমরা বিবিআইএন নিয়ে ভারতকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের ট্রাক যেন ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেতে পারে, সে বিষয়ে তাদের সহায়তা চেয়েছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য আনা নেওয়া করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ট্রাক যেন আগরতলায় যেতে পারে, সেই সুযোগও চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বিদ্যুৎও বিক্রি করতে চায় ঢাকা।

বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে দুই পক্ষ থেকে।

দুই দেশের যৌথ বিবৃতির পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের ব্রিফিংয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ভারত বরাবরই বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে তার পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে পণ্য পাঠানোর সুযোগ পেতে আগ্রহী। শর্তসাপেক্ষে নৌ ট্রানজিট দেয়া হলেও স্থলপথে ট্রানজিটের সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যে বাংলাদেশ এবার পাল্টা এই সুযোগ চাইল।

ট্রানজিট নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের আলোচনা শুরু হয় ২০১২ সালে। চার বছর পর ২০১৬ সালের ১৬ জুন নৌ প্রটোকলের মাধ্যমে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে, আর আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত সড়কপথে নির্দিষ্ট মাশুল দিয়ে পণ্য আনা নেয়ার সুযোগ পায় ভারত। তবে সড়ক পথে সরাসরি ট্রানজিট সুবিধা এখনও দেয়া হয়নি, যেটা নিয়ে ভারতের আগ্রহ বেশি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিবিআইএন নিয়ে ভারতকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের ট্রাক যেন ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেতে পারে, সে বিষয়ে তাদের সহায়তা চেয়েছি।’

বিবিআইএন হলো ‘বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল সংযুক্তি’, যেটি ১৯৯৭ সালের ১৪ মে গড়ে ওঠে। পরের বছর বাংলাদেশ সরকার বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট এর খসড়া তৈরি করে। ভুটানের এর রাজধানী থিম্পুতে এই খসড়ার অনুমদন দেয়া হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী চারটি দেশের যাত্রী ও পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ি নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করতে পারবে এবং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফেনী নদী পার হয়েও যেন আমাদের ট্রাক ওপারে আগরতলায় যেতে পারে, আমরা সে দাবিও তুলেছি। তারাও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।’

ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় বলেও ব্রিফিংয়ে জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তাদের (ভারত) বিদ্যুৎ গ্রিড নিয়ে নতুন চিন্তা করার কথা বলেছেন। আমরা সে দেশ থেকে অনেক বিদ্যুৎ কিনে থাকি। এখন আমরা নিজেরাও অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি।

‘আমাদের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ যাতে নেপাল বা ভুটানে রপ্তানি করতে পারি, সেজন্য তিন দেশের যৌথ গ্রিড স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে সবাই যার যার প্রয়োজনে যে কোনো দেশ থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারি।’

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যে চলমান ত্রিদেশীয় হাইওয়ে প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের কলকাতা থেকে মেঘালয় পর্যন্ত কানেক্টিভিটি তৈরি করতে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন মোদি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত সড়ক তৈরি করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে তার কাছে প্রস্তাব এসেছিল ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মিয়ানমারে এই সড়ক যাবে। কিন্তু তিনি তা বাতিল করেছিলেন।

হাসিনা-মোদির ভিডিওকনফারেন্সিংয়ে দিনে দুই দেশের মধ্যে সাত বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ৩৮ বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ

‘তারা এখন অনেক ঘুরে সেই সড়ক তৈরি করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কানেকটিভিটি বাড়াতে এই সড়কে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন।’

ভারত কোনো পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে সেটা আগেভাগে বাংলাদেশকে জানাতে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মোদিকে জানান, ভারত হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন মোদি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতে বাংলাদেশি কিছু পণ্য আমদানিতে এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার।

দুই সরকার প্রধানের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে বলে জানানো হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছে ভারত।

বলা হয়, মিয়ানমারের ১১ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেয়ার বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান মোদি। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারতের সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা।

হাসিনা-মোদির ভিডিওকনফারেন্সিংয়ে পর আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে ব্রিফ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়া ভারতকে অভিনন্দনও জানান শেখ হাসিনা। আর এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান মোদি।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, অভিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে একযোগে কাজ করতেও দুই সরকার প্রধান একমত হন।

আলোচনায় ৫৫ বছর বন্ধ থাকা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে ফের ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর রেললিংকটি বন্ধ হয়ে যায়।

এ দিন দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়। আর ৩৭টি বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত দুই সমস্যা অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও সীমান্ত হত্যা নিয়েও কথা হয়েছে দুই পক্ষে।

ভারত জানিয়েছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে দেশের সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।

আর সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী আর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করবে না বলে আশ্বাস দেন মোদি।

এ বিভাগের আরো খবর