বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অন্যান্য অনেক প্রসঙ্গের সঙ্গে এটিও তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার দুই দেশের নেতার মধ্যে আলোচনা শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও জবাব দেন।
গণমাধ্যমকর্মীরা জানাত চান, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না।
২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর ঢাকা সফরে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতায় আটকে যায় এই চুক্তি।
২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরেও এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় মোদি তার সরকারের ওই আমলে চুক্তি করার বিষয়ে আশ্বাস দেন। তবে সে কথা ফলেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কতগুলো নদী বিলি বণ্টন নিয়ে সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিস্তা নিয়েও কথা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা দারুণ সহানুভূতিশীল।
‘তারা (ভারত) বলেছেন, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। কেবল বাস্তবায়ন বাকি। এ নিয়ে কথা তুলে বিব্রত করবেন না।’
মন্ত্রী জানান, মহুরী নদীর সীমাও চিহ্নিত হয়েছে। আরও পাঁচটি নদীর সীমানা চূড়ান্ত করতে যৌথ কমিটির বৈঠকের কথা দ্রুত করার কথা বলেছে ভারত।
‘তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের কুশিয়ারা নদীর ৫০ মিটার খনন করতে দেয়নি। আমার এ বিষয়ে কথা বলেছি। এতে আমরা আরও পানি পাব এবং আমাদের সেচের জমি বাড়বে। তারা এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে’- বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকের বিষয়ে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা তুলে ধরেন।
‘এছাড়াও ছয় যৌথ নদী মানু, মহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমোর নদীর পানি বণ্টনের বিষয়েও ঐক্যমত পোষণ করেন দুই সরকার প্রধান।’
‘ম্যাচিউর ডিপ্লোমেসি’
সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকে শেখ হাসিনাই বেশি কথা বলেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, এই আলোচনা ‘আজকের আবহাওয়ার মতোই অত্যন্ত ঝলমলে ও ভালো হয়েছে।’
এক ‘ম্যাচিউর ডিপ্লোমেসি’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীই স্যাটিসফিকশন এক্সপ্রেস করেছেন।’
শেখ হাসিনা মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক খুলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এই সড়ক দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকার, বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা কলকাতা থেকে শপথ নিতে এসেছিলেন। এখন সড়কটি বন্ধ আছে।
মোদি এই অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
সীমান্ত হত্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে মোদি সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের না করার অঙ্গীকার করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানেও অপরাধ হয়। এজন্য যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে।’
রোহিঙ্গা নিয়েও কথা হয়েছে। ভারত বলেছে, এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই সমস্যা এ এলাকায় জঙ্গি ও সহিংসতার ঝুঁকিতে ফেলেছে। তারা বলেছে, এর একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের তাদের ভিটেয় নিরাপদে ফিরে যাওয়া। এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।’
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন ব্যাংক ব্রিকস-এ যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই দেশ পাঁচটি বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ জিডিপির অধিকারী।
ব্যাংকটির প্রারম্ভিক মূলধন ১০০ বিলিয়ন ডলার। ব্রিকসের এই ব্যাংকটিকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো পশ্চিমা বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। কারণ আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।’