বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভ্যালু চেইনকে সম্মৃদ্ধ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সাথে স্বীকৃতি দেই। বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে নিযুক্ত এবং তারা ভারতে রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী ভারতে যাচ্ছে এবং এ সহযোগিতা নিচ্ছে।
‘আমি বিশ্বাস করি উভয় দেশ এ অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন আরও সম্মৃদ্ধ করতে পারে।‘
এই আলোচনায় দুই নেতা ৫৫ বছর বন্ধ থাকা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে ফের ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর রেললিংকটি বন্ধ হয়ে যায়।
এ দিন দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়।
ভিডিও কনফারেন্সে দুই নেতা মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। মোদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
ভারতে বঙ্গবন্ধুর নামে স্মারক ডাক টিকিট এবং বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধিকে নিয়ে ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধনও করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
মোদি তার বক্তব্যে বলেন, তার দেশ সব প্রতিবেশীর মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তব্যে সহযোগিতার কথাই বলেন। বলেন, ‘আমাদের চলমান যোগাযোগের উদ্যোগগুলি এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর উদাহরণ চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলযোগাযোগ পুনরায় চালু করা।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে রেলরুট দিয়ে বাণিজ্য, উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শন ও সভা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য সামগ্রীর প্রথম পরীক্ষামুলক চালান প্রেরণ, কোভিডকেন্দ্রিক বিভিন্ন সহযোগিতামূলক উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।’
করোনা মোকাবিলায় ভারত সরকারের নেয়া পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের পদক্ষেপ তুলে ধরেন। ১৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা জানান। বলেন, ‘আমরা আড়াই কোটিরও বেশি মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি,তাদের সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারিত করেছি।’
বৈঠকের পর এর আগে, সকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনীতি ও পরিবেশবিষয়ক সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
ভারতের পক্ষে দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, বাংলাদেশের পক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্মারকগুলোতে সই করেন।
চুক্তি অনুসারে হাতি সংরক্ষণ, বরিশালে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, জ্বালানি সহযোগিতা (হাইড্রোকার্বন), কৃষি সহযোগিতাবিষয়ক এসব এমওইউর আওতায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে ভারত সরকার।
নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেল আবার চালু করার পর জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট সাতটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টের মধ্যে পাঁচটিতে রেলওয়ে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।
এর ফলে বাংলাদেশের মোংলা পোর্ট এবং উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ, নেপাল এবং ভূটানের মধ্যে আমদানি-রফতানিসহ সব ধরনের বাণিজ্যির কার্যক্রম আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা রুটটি চালু হওয়ায় বাংলাদেশি পর্যটকরা দার্জিলিংসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে দ্রুত ও সহজে ভ্রমণ করতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে এ রেলপথে শুধু মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। তবে আগামী বছর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।