আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, দেশর ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে ভারতীয় নেতার উপস্থিতি গৌরবের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখবে।
বাংলাদেশ নেতা জানান, বিশ্বের বেশ কিছু শহরে একাত্তরের মতোই দুই দেশ একত্র হয়ে কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুই নেতার মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মোদি বলেন, ‘আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়া আমার জন্য সম্মানজনক।’
দুই নেতার মধ্যে এই ভিডিও কনফারেন্সে ভারতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাকবিভাগের বিশেষ ডাকটিকেটের মোড়ক উন্মোচন ও বঙ্গবন্ধু-বাপু (মহাত্মা গান্ধি) ডিজিটাল প্রদর্শনীর উব্দোধন করা হয়।
এদিন দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
পাশাপাশি ৫৫ বছর বন্ধ থাকা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে পুনরায় রেল চলাচল আবার চালু করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ মোদি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এই পথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিজয় দিবসের পরদিন এই কনফারেন্সে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ উঠে আসে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ, এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচার এবং যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে মিলেছে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের এই ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নতুন বছরে মোদিকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় আপনার উপস্থিতি আমাদের যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখবে।’
পাঁচ দশক আগে দুই দেশ যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল, একাত্তরের বিজয় উদযাপনে এবারও দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান জাতির জনকের কন্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র স্মরণে আমরা বিশ্বব্যাপী বাছাই করা কিছু শহরে আগামী বছর জুড়ে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা স্থগিত করা হয় করোনা সংক্রমণের কারণে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল মোদির।
সেই প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, এর পরেও দুদেশের সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ উঠে আসে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপনকে গর্বের বলে মন্তব্য করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশের শহিদদের শ্রদ্ধাও জানান।
মোদি বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল আমি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা জানিয়েছি এবং বিজয় মশালে অগ্নি প্রজ্বালন করেছি। এই মশালগুলো সারা ভারতেই ছড়িয়ে দেয়া হবে।
‘এগুলো সেই সব গ্রামে নেয়া হবে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহিদরা জন্ম নিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছি। এ সময় সারা ভারতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তার পরিবারকে মুক্ত করার কথাও তুলে ধরেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিঃশর্তে আত্মসমর্পণের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুক্ত করে ভারতীয় বাহিনী। সেদিনের স্মৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৭ ডিসেম্বর, পাক বাহিনীর অধীনে তখনও আমার মা, রেহানা, রাসেল, আমি ও ছোট চার মাসের জয় বন্দি ছিলাম। ভারতের কর্নেল অশোক তারা এসে এই দিন সকালে আমাদের সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন।’
‘১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত হয়, আমরা ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হই। আজকের এই দিনে কর্নেল অশোক তারাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারতের স্বশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সবার জন্যই আমার কৃতজ্ঞতা। সে দিন আমরা যারা মুক্ত হয়েছিলাম শুধু জয়, আমি আর রেহানাই বেঁচে আছি, আর কেউ বেঁচে নেই।’