প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মনে করেন, জাতির জনকের কন্যা তার বাবার মতোই রাজনীতি ও দেশ পরিচালনায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন।
বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সে ভারতীয় নেতা বাংলাদেশ নেতার এই প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মোদি বলেন, ‘মুজিব চিরন্তন। বঙ্গবন্ধুর বার্তা শাশ্বত। আমরা তার সেই পথকে ধারণ করি। আপনার নেতৃত্বেও সেই প্রতিফলন দেখা যায়।’
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই পাকিস্তান আমলে ২৪ বছরের সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার নেতৃত্বেই হয় মুক্তিযুদ্ধ। আর তিনিই বাংলাদেশের জাতির পিতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার রাতে শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান তারা দেশের বাইরে থাকায়। ওই হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফেরেন তার বাবার দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে।
দেশে ফেরার ১৫ বছর পর আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এর আগের নয় বছর তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আরও দুই দফা তিনি সরকার প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার আমলেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে।
বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মেয়ে শেখ হাসিনার চিত্রকর্ম
ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা, জল সীমানাসহ বেশ কিছু অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে শেখ হাসিনার আমলেই। তবে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং বিশেষ করে সীমান্ত হত্যার মতো সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। তবে দুই পক্ষ এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই অনুষ্ঠানে মোদি ও শেখ হাসিনা ভারতীয় ডাক বিভাগ থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর একটি স্মারক ডাকটিকিট যৌথভাবে অবমুক্ত করে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু-বাপুজি (মহাত্মা গান্ধী) ডিজিটাল প্রর্দশনীরও উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহাত্মা গান্ধীর ওপর একটি প্রমো দেখানো হয়।
করোনাকালে দুই নেতার মধ্যে এই ভিডিও কনফারেন্সে মুক্তিযুদ্ধ, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয় উঠে আসে।
মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়া তার জন্য সম্মানজনক।
এই কনফারেন্সে দুই নেতা যৌথভাবে এদিন দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
পাশাপাশি ৫৫ বছর বন্ধ থাকা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে পুনরায় রেল চলাচল আবার চালু করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ মোদি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এই পথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মোদি তার ভাষণে বলেন, তার দেশ সব প্রতিবেশীর মধ্যে বাংলাদেশকে সব সময় বেশি গুরুত্ব দেয়। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নকে সব সময় অগ্রাধিকার দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার ক্রান্তিকালে দুই দেশ যেভাবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য।