প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও আরও গভীর করা তার দেশের অগ্রাধিকার।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
মোদি বলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশীদের নিয়ে যে নীতি রয়েছে তাতে বাংলাদেশ সবসময় প্রথমে। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গভীর করা, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ছিল আমার জন্য অগ্রাধিকার।’
ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের পর দিন এই কনফারেন্সে স্বভাবতই মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ, এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচার এবং যুদ্ধের শেষ দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের এই ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিঃশর্তে আত্মসমর্পণের পরের দিন বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুক্ত করে ভারতীয় বাহিনী।
সেদিনের স্মৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৭ ডিসেম্বর, পাক বাহিনীর অধীনে তখনও আমার মা, রেহানা, রাসেল, আমি ও ছোট চার মাসের জয় বন্দি ছিলাম। ভারতের কর্নেল অশোক তারা এসে এই দিন সকালে আমাদের সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন।
‘১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত হয়, আমরা ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হই। আজকের এই দিনে কর্নেল অশোক তারাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সবার জন্যই আমার কৃতজ্ঞতা। সে দিন আমরা যারা মুক্ত হয়েছিলাম, শুধু জয়, আমি আর রেহানাই বেঁচে আছি, আর কেউ বেঁচে নেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপনকে ‘গর্বের’ বলে মন্তব্য করে মোদি। মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশের শহিদদের শ্রদ্ধাও জানান তিনি।
মোদি বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল আমি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা জানিয়েছি এবং বিজয় মশালে অগ্নি প্রজ্বালন করেছি। এই মশালগুলো সারা ভারতেই ছড়িয়ে দেয়া হবে।
‘এগুলো সেই সব গ্রামে নেয়া হবে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহিদরা জন্ম নিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছি। এ সময় সারা ভারতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।’
মোদি বলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশী নীতিতে বাংলাদেশ প্রথম। ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থকে আগে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।’
আলোচনায় আগামী বছরের শুরুতে মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মোদি বলেন, ‘আপনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানাতে পারা আমার জন্য বিরাট সম্মান।’
বাংলাদেশ নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারায় সন্তোষ জানিয়ে ভারতীয় নেতা বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্ব ভার্চুয়াল সামিট আয়োজন করছে। কিন্তু আপনার এবং আমার জন্য এটা নতুন কিছু নয়।
‘আমরা বহু বছর ধরেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে আসছি। এমনকি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনও আমরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করেছি।’
করোনা মহামারির কঠিন সময়েও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে একে ‘অত্যন্ত সুখকর’ বলেও বর্ণনা করেন মোদি।
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাত ছাড়াও আমাদের স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা একত্রে কাজ করছে। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও খুব ভালো সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত ছাড়াও আমাদের সম্পর্ক অন্য খাতগুলোতেও ছড়িয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো ছিল, তা আমরা দূর করতে পেরেছি। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও অনেক উন্নতি হয়েছে। এগুলোই চিহ্নিত করে আমাদের সম্পর্ক কতটা মজবুত।’
দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। একই দিন ৫৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নীলফামারীর চিলাহাটী ও পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ী লাইনে চালু হয় ট্রেন।